Saturday, March 2, 2019

বাবে রহমতের সাপ্তাহিক মাহফিলে সূফী সম্রাট


সূফী সাধনার মাধ্যমে মানুষ নিজের রিপুকে দমন করতে পারে


মহান সংস্কারক মোহাম্মদী ইসলামের পুনর্জীবনদানকারী সূফী সম্রাট হযরত সৈয়দ মাহবুব-এ-খোদা দেওয়ানবাগী (মাঃ আঃ) হুজুর কেবলা বলেন, সূফী সাধনার মাধ্যমে মানুষ নিজের রিপুকে দমন করতে পারে। এই রিপু দমনের একমাত্র ঔষধ হলো ফায়েজ। সেই ফায়েজটা আল্লাহর কাছ থেকে হযরত রাসূল (সঃ) হয়ে আসে। সেই ফায়েজটা মানুষকে পবিত্র করে দেয়, রিপুগুলোকে ঘুম পাড়িয়ে দেয়। ঐ ফায়েজের মাধ্যমে আত্মশুদ্ধি লাভ করতে হয়। যে যতবেশী ফায়েজ অর্জন করতে পারবে, সে ততবেশী উপকৃত হবে। তিনি গত ২রা মার্চ শুক্রবার রাজধানী ঢাকার মতিঝিলের আরামবাগস্থ বাবে রহমত দেওয়ানবাগ শরীফে অনুষ্ঠিত সাপ্তাহিক আশেকে রাসূল (সঃ) মাহফিলে সমবেত হাজার হাজার আশেকে রাসূলের উদ্দেশ্যে বাণী মোবারক প্রদান করছিলেন।
সূফী সম্রাট হুজুর কেবলা বলেন, আদম সন্তানের দিলে শয়তান বাস করে। শয়তানের বাসস্থান মানুষের দিল। হযরত রাসূল (সঃ) ফরমান, যখন সেই দিলে আল্লাহর জ্বিকির জারি হয়, তখন শয়তান তীরের মত ভেগে যায়। এই কারণে আমাদের তরীকায় ক্বালবে জ্বিকির আমরা শিক্ষা দেই। আগে আমরা জানতাম না। আমার মোর্শেদের কাছে জানতে পেরেছি- আত্মশুদ্ধি, দিলজিন্দা, নামাজে হুজুরী। তাফসীর লিখতে গিয়ে পবিত্র কুরআনে পেয়েছি, আল্লাহ্ হযরত মুসা (আঃ)-এর কাছে ওহী নাজিল করে বলেছিলেন, আপনার অনুসারীদেরকে তিনটা বিষয় শিক্ষা দেন- আত্মশুদ্ধি, দিলজিন্দা, নামাজে হুজুরী। হযরত ইব্রাহীম (আঃ)-এর কাছে আল্লাহ্ ওহী নাজিল করে বলেছেন, আপনার অনুসারীদেরকে আত্মশুদ্ধি, দিলজিন্দা, নামাজে হুজুরী শিক্ষা দেন। আমরা এইটা পেয়েছি, আমার মুর্শেদ পীরানে পীর, দস্তগীর, সুলতানুল মাশায়েখ, সুলতানিয়া মোজাদ্দেদীয়া তরীকার ইমাম সৈয়দ আবুল ফজল সুলতান আহমদ (রহঃ)-এর কাছে। এই শিক্ষাটাই আমার মুর্শেদ আমাকে দিয়েছেন। এই শিক্ষাটা সাধনা করতে গেলে মানুষের মধ্যে আল্লাহর প্রেম, রাসূলের প্রেম জাগ্রত হয়। আমরা এটার সাথে সংযোগ করেছি আশেকে রাসূল হওয়া। কারণ রাসূলের যুগ পর্যায়ক্রমে অনেক দূরে, চলে গেছে। এখন হযরত রাসূল (সঃ)-এর শিক্ষা সমাজে নাই। মানুষ রাসূলের কথা বলেই মানুষকে বিপথগামী করে। আমরা ঈমানী পরীক্ষায় পাশ করার জন্য আমরা হযরত রাসূল (সঃ)-এর এই শিক্ষাটায় মিলাদ সংযোগ করেছি। কারণ মিলাদটা পড়লে রাসূলের মহব্বতে কান্না আসে। এই মিলাদটা পড়লে আশেকে রাসূল হওয়াটা সহজ। এছাড়াও আমরা নিয়মিত দরূদ পড়ি।
তিনি বলেন, আমি যখন দেওয়ানবাগ শরীফের বাবে জান্নাতে ছিলাম, তখন ঐখানে এক ঈদে মিলাদুন্নবী (সঃ)-এর সম্মেলনে অসংখ্য লোক হয়েছিল। আমি জিজ্ঞাসা করেছিলাম, আপনারা কারা কারা আমার এখানে এসে রাসূল (সঃ)-কে দেখেছেন? অসংখ্য লোক হাত তুলেছিল। এরপরে আমি বললাম, এতলোক যেহেতু হযরত রাসূল (সঃ)-কে স্বপ্নে দেখেছে, সেহেতু আমরা এখন থেকে সূফী সম্মেলন না করে, আমরা করবো আশেকে রাসূল (সঃ) সম্মেলন। এরপর থেকেই আমরা আশেকে রাসূল (সঃ) সম্মেলন শুরু করি। তখন আমি প্রকাশ্যে ঘোষণা দিয়েছিলাম, আপনারা প্রত্যেকেই নিজ নিজ বাড়ীতে মিলাদ দেন। যারা মিলাদ দিবেন, তারা রাসূলের দিদার পাবেন। রাব্বুল আলামীন দয়া করেছেন, যারা মিলাদ দিয়েছে তাদের রাহমাতাল্লিল আলামীন দয়া করে দিদার দিয়েছেন। বহু লোক রাসূলের দিদার পেয়েছে। এখনও অনেকে আমার কাছে এসে বলে, মিলাদ দিয়ে হযরত রাসূল (সঃ)-এর দিদার পেয়েছে। আপনারা যারা উপস্থিত আছেন, আপনারা কি রাসূল (সঃ)-কে দেখেন না। আপনারা যদি দেখে থাকেন, তবে আপনাদের এদেখা প্রমাণ করে- আপনি রাসূলের উম্মত। না দেখে, না চিনে কিভাবে নিজেকে উম্মত প্রমাণ করবেন।
সূফী সম্রাট হুজুর কেবলা বলেন, যে যাহা ধারন করে তাই তার ধর্ম। আপনার চরিত্রটা কি? শান্তির না অশান্তির। যদি আপনার ধর্ম শান্তির হয়, তবে আপনি মুসলমান। আর অশান্তির হয় তবে আপনি মুসলমান না। এই শিক্ষাটাই অলী-আল্লাহদের দরবারে শিখানো হয়। এই শিক্ষা যেখানে পাবেন, সেখানে আপনার যেতে বাধাঁ নেই। আমাদের দরকার আল্লাহকে পাওয়া, রাসূলকে পাওয়া, চরিত্র সুন্দর করা। আপনি যদি তা করতে পারেন, তবে ঈমানের পরীক্ষায় পাশ করতে পারবেন। আল্লাহ্ কুরআনে বলেন, মু’মেনদের সাথে আল্লাহ্ সকাল সন্ধ্যা দুইবার দিদার দিবেন। আর কাফেরদের সামনে একটা পর্দা করে দিবেন, তারা যেন আল্লাহকে দেখতে না পারে। কাফের আর মুমিনদের মধ্যে পার্থক্য- এক মজলিসে কাফেরদের সামনে পর্দা, আর মুমিনদের সামনে এসে আল্লাহ্ দাঁড়াবেন। মুমেনরা প্রাণভরে আল্লাহকে দেখবেন। আমাদের আল্লাহকে পেতে হবে, রাসূলকে পেতে হবে, চরিত্র সুন্দর করতেই হবে। এই তিনটা না হলে আমরা মুক্তি পাব না। এটা আমাদের মনে রাখতে হবে। এটা গল্পের বিষয় না, সাধনার বিষয়। সাধনা করে যারা আল্লাহকে পেয়েছে, তারা পরম শান্তিতে আছে। আর যারা আল্লাহকে হারিয়েছে তারা চরম অশান্তিতে আছে।
তিনি বলেন, আশেকে রাসূলেরা! মনোযোগ দিয়ে তরীকার কাজ করেন। আমাদের এখানে কুরআন হাদীসের বাইরে কোন কাজ আমরা করি না। আর কেউ তা করুন, সেটাও আমরা পছন্দ করি না। আমরা চাই আমারা যেন রাসূলের দিদার পাই, রাসূলের চরিত্রে চরিত্রবান হতে পারি এবং আল্লাহর দিদার পাই। আপনারা অধিক মোরাকাবা করবেন। হযরত রাসূল (সঃ) পনের বছর মোরাকাবা করার পরেই আল্লাহর সাথে তাঁর যোগাযোগ হয়েছে। আমরা ঐ পনের বছরের মোরাকাবাটা আমাদের সারা জীবনের সাথে মিলিয়ে যদি পাচঁ ওয়াক্ত নামাজে মোরাকাবা করি, আর শেষ রাতে মোরাকাবা করি। এভাবে প্রতিদিন ছয়বার মোরাকাবার মাধ্যমে যদি রাসূলের কাছে যান, গিয়ে কান্নাকাটি করেন। রাসূলের জুতা মোবারক ভিক্ষা নিয়ে আল্লাহর আরশে হাজির হন, কান্নাকটি করেন, আল্লাহর কাছ থেকে ফায়েজ নিয়ে রাসূলের মাধ্যমে আপনার ক্বালবে নিয়ে আসেন, তাহলে আপনার রাসূলের সাথে পরিচয় হবে, আল্লাহর সাথেও পরিচয় হবে। আল্লাহ্ ও রাসূলের সাথে পরিচয় হলে আপনি স্বাধীন, আপনি মুক্ত। আপনার জন্যই আল্লাহর সৃষ্টি জগৎ। সুতরাং মহব্বতের সাথে তরীকার আমল করেন।
সকাল ১০টায় অনুষ্ঠান শুরু হলে- প্রথমে আশেকে রাসূলদের মোহাম্মদী ইসলামের ওয়াজিফার তালিম দেওয়া হয়। দুপুর সাড়ে ১২টায় জু’মার নামাজের আজানের পর মোহাম্মদী ইসলামের মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। অতঃপর বেলা দেড়টায় জু’মার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। এরপর সূফী সম্রাট হুজুর কেবলা মাহফিলে সমবেত হাজার হাজার আশেকে রাসূলদের উদ্দেশ্যে বাণী মোবারক প্রদান করে মাহফিলের আখেরী মুনাজাত পরিচালনা করেন। এরপর তিনি নবাগতদের সবক দেন। মাহফিল শেষে সবাই তাবারুক খেয়ে বিদায় নেন।