Saturday, January 11, 2020

বাবে রহমতের সাপ্তাহিক মাহফিলে সূফী সম্রাট

“নিয়মিত ওয়াজিফার আমল করলে আল্লাহর দয়া পেতে সুবিধা হবে”

মহান সংস্কারক মোহাম্মদী ইসলামের পুনর্জীবনদানকারী সূফী সম্রাট হযরত সৈয়দ মাহবুব-এ-খোদা দেওয়ানবাগী (মাঃ আঃ) হুজুর কেবলা বলেন, আশেকে রাসূলেরা! নিয়মিত তরীকার ওয়াজিফাটা আমল করেন। এই ওয়াজিফা আপনাকে আল্লাহর দয়া পেতে সাহায্য করবে। তিনি গত ১১ জানুয়ারী, শুক্রবার রাজধানী ঢাকার মতিঝিলের আরামবাগস্থ বাবে রহমত দেওয়ানবাগ শরীফে সাপ্তাহিক আশেকে রাসূল (সঃ) মাহফিলে সমবেত হাজার হাজার আশেকে রাসূলের উদ্দেশ্যে বাণী মোবারক দিচ্ছিলেন।
সূফী সম্রাট হুজুর কেবলা বলেন, হযরত আদম (আঃ) থেকে এই পর্যন্ত পৃথিবীতে যত মানুষ এসেছে, যত মুনি, ঋষি, নবী-রাসূল, গাউস কুতুব এসেছেন। সবাই আবার পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছেন। সবাই চলে যাবে এটাই আল্লাহর বিধান। এই দুনিয়াটা আমাদের জন্য একটা পরীক্ষা কেন্দ্র। আল্লাহ্ এখানে আমাদের পাঠিয়ে ঈমানের পরীক্ষা নেন। পৃথিবীতে পাঠিয়ে বিভিন্ন সমস্যায় ফেলে পরীক্ষা নেন। পাশ করলে মুমিন, আর ফেল করলে লাইনচ্যুত হয়ে যায়। যত নবী রাসূল, অলী-আল্লাহ্ এসেছেন, তাঁদেরও পরীক্ষা হয়েছে। তাঁদের অনুসারীদেরকেও পরীক্ষায় পড়তে হয়েছে। ঐ পরীক্ষায় যারা টিকতে পেরেছে, তারা মুমিন হয়ে প্রমোশন পেয়েছেন। আর যারা টিকতে পারেনি, তারা আবার ফেঁসে গেছে।
তিনি বলেন, মৃত্যু কখনো ফোন করে বা টেলিগ্রাম করে আসে না। নির্দিষ্ট সময় হলে দেখবেন গ্রাস করে ফেলেছে। মানুষের শিক্ষা দীক্ষা কোন কিছুই মৃত্যুর সময় সাহায্য করতে পারে না। যদি কেউ ঈমানী পরীক্ষায় পাশ করতে পারে, তখন সে আল্লাহর দয়া পায়, রাসূলের দয়া পায়, ঈমানের সাথে জগত থেকে বিদায় নিতে পারে। আমরা জাকেরদের যে শিক্ষা দিচ্ছি, সেটা হলো- সে কিভাবে ঈমানের সাথে মৃত্যুবরণ করবে। এই কারণে ক্বালবে জ্বিকিরের শিক্ষা দেই। সমাজের হুজুরেরা তো বিশ্বাসই করে না যে, মানুষের ক্বালবে জ্বিকির হতে পারে। কিন্তু আপনারা যারা তরীকা নিয়েছেন, তারা বুঝতে পারেন। এখন দেখেন, আপনাদের সাথে হুজুরদের কত পার্থক্য। অথচ তারা নাকি নায়েবে রাসূল। পবিত্র কুরআনে অতীতের নবী-রাসূলদের জীবনে কি কি ঘটনা ঘটেছে, সেগুলো বর্ণনা করা হয়েছে। তাঁরা যেসমস্ত বাঁধার সম্মুখীন হয়েছেন, সেগুলো যদি আপনারা জানেন, তা আপনাদের সাহায্য করবে। আপনারা বুঝতে পারবেন যে, তারা তখন ভালো অবস্থায় ছিলেন না। যাঁরা ইসলাম গ্রহণ করেছে, তাঁরা চরমভাবে নির্যাতিত হয়েছে।
সূফী সম্রাট হুজুর কেবলা বলেন, হযরত রাসূল (সঃ)-এর পরিবারবর্গ সারা জগতবাসীর কাছে শ্রদ্ধার পাত্র। কিন্তু এরপরেও হযরত রাসূল (সঃ)-এর প্রিয় দৌহিত্র ইমাম হাসান (রাঃ) ও ইমাম হোসাইন (রাঃ)-কে নির্মমভাবে শহীদ করা হয়েছে। এইভাবে অতীতের নবী, রাসূলদেরকে চরমভাবে নির্যাতন করে শহীদ করা হয়েছে। আজকে বিশ্বের সব দেশের মুসলমানরা গাউসে পাক হযরত আবদুল কাদের জিলানী (রহঃ)-কে বড়পীর বলে শ্রদ্ধা করে, সম্মানের সাথে তাঁর নাম নেয়। অথচ তিনিও চরমভাবে নির্যাতিত, নিষ্পোষিত হয়েছিলেন।
তিনি বলেন, আশেকে রাসূলেরা! এতে আপনাদের দুঃখ পাবার কিছুই নেই। আপনি যখন আল্লাহর কথা বলবেন, তখন আপনার উপর ঝড় আসবেই। কোন নবী- কোন রাসূল স্বাভাবিকভাবে জগত থেকে বিদায় হয়নি। কুল কায়েনাতের রহমত রাহমাতাল্লিল আলামীন রাতের আঁধারে, মক্কা হতে মদীনায় হিজরত করেছিলেন। মদীনায় যাওয়ার পরেও ঐ জালেমরা রাসূল (সঃ)-এর উপরে আক্রমণ করেছে। বদর, ওহুদ যুদ্ধে শত শত সাহাবীকে হত্যা করেছে। এখনতো কিছু হলেই আমরা বলি, এটা একটা কারামত দেখিয়ে ঠিক করে দিতে পারে না? হযরত রাসূল (সঃ) তো কারামত দেখিয়ে ঠিক করেন নি। আল্লাহর পক্ষ থেকে যাদেরকে ঈমানদার করবেন, তাদেরকে হয়তো রাসূল (সঃ) সাহায্য করেছেন। সুতরাং মহব্বতের সাথে তরীকার কাজ করেন, আল্লাহর দয়া পেলে ঈমানের উপর কায়েম থাকতে পারবেন। আল্লাহর দয়া ছাড়া কোন মানুষই ঈমানদার হতে পারে না। মনোযোগ দিয়ে তরীকার কাজ করেন, আল্লাহ্ দয়া করে সাহায্য করবেন।
সকাল ১০টায় অনুষ্ঠান শুরু হলে- প্রথমে আশেকে রাসূলদের মোহাম্মদী ইসলামের ওয়াজিফার তালিম দেওয়া হয়। দুপুর সোয়া ১২টায় জু’মার নামাজের আজানের পর মোহাম্মদী ইসলামের মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। এরপর বেলা দেড়টায় জু’মার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। অতঃপর সূফী সম্রাট হুজুর কেবলা মাহফিলে সমবেত হাজার হাজার আশেকে রাসূলদের উদ্দেশ্যে বাণী মোবারক প্রদান করে মাহফিলের আখেরী মুনাজাত পরিচালনা করেন। এরপর তিনি নবাগতদের সবক দেন। মাহফিল শেষে সবাই তাবারুক খেয়ে বিদায় নেন।

Saturday, January 4, 2020

বাবে রহমতের সাপ্তাহিক মাহফিলে সূফী সম্রাট


“জীবনের সময় থাকতেই ধর্ম শিখতে হয়”

মহান সংস্কারক মোহাম্মদী ইসলামের পুনর্জীবনদানকারী সূফী সম্রাট হযরত সৈয়দ মাহবুব-এ-খোদা দেওয়ানবাগী (মাঃ আঃ) হুজুর কেবলা বলেন, আমাদের জীবনের সময় থাকতেই ধর্ম শিখতে হয়। আজ নববর্ষের প্রথম শুক্রবার। হিসেব করে দেখেন আমাদের জীবনে কতগুলো বছর শেষ হয়ে গেছে। সমাজে একটা কথার প্রচলন আছে, চল্লিশ বছরের পরে মুরিদ হতে হয়। যারা মুরিদ হয়নি, তারা কেউ কেউ বলে, আমাদের সময় এখনো শেষ হয়ে যায়নি, চল্লিশের পরে আমরা মুরিদ হবো। চল্লিশের পরে মুরিদ হয়ে তরীকা শিখবো। এটা হলো আমাদের অবহেলার কারণে। ধর্মের প্রতি আমাদের আকর্ষণ না থাকার কারণে। তিনি গত ৪ঠা জানুয়ারী, শুক্রবার রাজধানী ঢাকার মতিঝিলের আরামবাগস্থ বাবে রহমত দেওয়ানবাগ শরীফে সাপ্তাহিক আশেকে রাসূল (সঃ) মাহফিলে সমবেত হাজার হাজার আশেকে রাসূলের উদ্দেশ্যে বাণী মোবারক দিচ্ছিলেন।
সূফী সম্রাট হুজুর কেবলা বলেন, রাব্বুল আলামীনের অসীম দয়ায় আমাদের এখানে ছোট বাচ্চা থেকে শুরু করে যুবক ছেলেরা তরীকা নেয়। মনে রাখতে হবে- আমাদের জীবন থেকে এত বছর শেষ হয়ে গেছে। সেই দিন আর আমরা ফেরত আনতে পারবো না। এখন থেকে আমাদের এমনভাবে কাজ করতে হবে, আমরা যেন ঈমানের উপর, হযরত রাসূল (সঃ)-এর মহব্বতের উপর কায়েম থাকতে পারি।
তিনি বলেন, নবী-রাসূলগণ নিজে নিজের অনুসারীদের জন্য সাপ্তাহে একদিন ইবাদতের দিন হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন। হযরত রাসূল (সঃ) ইবাদতের দিন হিসেবে জু’ম্মার দিন শুক্রবার দিনকে বেছে নিয়েছেন। হযরত রাসূল (সঃ)-এর যুগে নবীজির পাড়া-প্রতিবেশী মুসলমানরা প্রতিদিন তাঁর সোহবতে আসতেন। আর যারা দূরে ছিলেন, তাদের পক্ষে প্রতিদিন আসা সম্ভব ছিল না। তাই তাদের জন্য হযরত রাসূলে পাক (সঃ) শুক্রবার জু’ম্মার দিনে জমায়েত বা একত্রিত হতে বলেছেন। ঐদিন সকলে থেকেই সাহাবায়ে কেরাম নবীজির দরবার শরীফে এসে বিভিন্ন কাজে খেদমত করতেন। সাহাবীরা খেদমত করার পরে হযরত রাসূল (সঃ) যখন বানী মোবারক রাখতেন, এর আগে জু’ম্মার সানি আজান বা দ্বিতীয় আজান দেয়া হতো। ঐ আজানের পরে সাহাবীরা কাজকর্ম ছেড়ে দিয়ে মসজিদে ঢুকতেন। হযরত রাসূল (সঃ) সানি খুৎবা দিতেন। সেই খুৎবা ছিল নসিহতের খুৎবা। মুসলমানরা কিভাবে আরেক সপ্তাহ চলবে সেই কথা। সুতরাং সেই খুৎবা ধারাবাহিকভাবে আজও চলে এসেছে।
সূফী সম্রাট হুজুর কেব্লা বলেন, হুজুররা বলে ছবি তোলা জায়েজ নয়, ছবি তোলা হারাম। যে ঘরে ছবি থাকে, সেই ঘরে রহমতের ফেরেশতা ঢুকে না। আপনি এক হুজুরকে দাওয়াত করলেন। দাওয়াতে এসে যদি সেখানে ছবি দেখে সে নিজেই ছবিটা উল্টে দিবে, যাতে তার নজরে না পড়ে। আসলে এদের ধর্ম সম্বন্ধে জ্ঞান নেই। তারা বলে, যে ঘরে ছবি থাকে সেই ঘরে রহমতের ফেরেশতা ঢুকে না। আমরা যদি বলি, পবিত্র কুরআনে বর্ণিত হয়েছে আসহাবে কাহাফের সাথে “কিতমির” নামে যে কুকুরটা ছিল, সেই কুকুরটাও জান্নাতি। তখন যদি প্রশ্ন করা হয়, যে ঘরে কুকুর ঢুকে ঐ ঘরে যদি রহমতের ফেরেশতা থাকে না, তবে আসহাবে কাহাফের কুকুরটা জান্নাতে প্রবেশ করলে কি বেহেশত থেকে সব ফেরেশতা বের হয়ে যাবে? আসলে ধর্ম সম্বন্ধে না জানার কারণে এই ভুলগুলো হচ্ছে।
তিনি বলেন, আমরা কুরআন শরীফ পড়লে দেখবো, সকল নবীদের ধর্মের কথা এখানে আছে। আমরা কুরআন সহি শুদ্ধভাবে পড়লাম। কিন্তু এর অর্থ বুঝলাম না, এতে কি লাভ? আল্লাহ্ কোরআনে যা নির্দেশ করেছেন, আমাদের সেই নির্দেশটা পালন করতে হবে। এইভাবে অজ্ঞতার মধ্যে আমাদেরকে ছেড়ে দিয়ে মূল ধর্ম থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। আমরা কায়দায় পড়েছি, “আমানতু বিল্লাহি ওয়া মালাইকাতিহি ওয়া কুতুবিহি ওয়া রাসূলিহি’” অর্থাৎ- আমরা বিশ্বাস স্থাপন করলাম আল্লাহর উপর, ফেরেশতাদের উপর, আসমানী কিতাবের উপর, আল্লাহর রাসূলদের উপর।” অথচ আমরা বাস্তব জীবনে এগুলো মানতে চাই না।
সূফী সম্রাট হুজুর কেবলা বলেন, হযরত রাসূল (সঃ)-এর জন্মের ৫৭০ বছর আগে হযরত ঈসা (আঃ)-এর জন্ম। আমরা ঈসা (আঃ)-এর সনটাকে মানছি। অথচ আমাদের ইসলামী ক্যালেন্ডার সম্বন্ধে খবর রাখি না। হযরত ওমর (রাঃ)-এর খেলাফত কালে মুসলমানদের নিজস্ব ক্যালেন্ডারের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। বিশিষ্ট সাহাবীদের নিয়ে তিনি পরামর্শে বসেন। বিভিন্ন জনে বিভিন্ন রকম প্রস্তাব দেয়। কিন্তু হযরত আলী (রাঃ) দীর্ঘ ভাষণ দিয়ে বুঝালেন, হিজরত হতে সন গণনা করলে আমাদের ভাল হবে। এরপর মুসলমানদের এই ক্যালেন্ডারের নাম হয় হিজরী ক্যালেন্ডার।
তিনি বলেন, ইংরেজী নববর্ষ সারা বিশ্বে পালন করা হচ্ছে। অথচ মুসলমানদের হিজরী পঞ্জিকার প্রথম মাস মহররম পালনে আমাদের তেমন কোন ধুমধাম নেই। এর কারণ ধর্ম সম্বন্ধে না জানা। আমরা ধর্মকর্ম করি, কিন্তু আমাদের ধর্ম সম্বন্ধে অনেক কিছুই জানা নেই। এসম্বন্ধে আমাদের জানতে হবে এবং কোরআন শিক্ষা করতে হবে। আজকে আমাদের শপথ হোক, আমাদের প্রতিজ্ঞা হোক আমরা যেন আল্লাহর ধর্মকে আঁকড়ে ধরি। আল্লাহর ধর্মকে যদি আকড়ে ধরতে না পারি, তবে আমরা আল্লাহকে পাবো কিভাবে? আশেকে রাসূলেরা! আমাদের জীবন থেকে অনেক বছর শেষ হয়েছে। আবার নতুন বছর শুরু হয়েছে। চেষ্টা করবেন আমাদের জীবনে যে সমস্ত দোষ-ত্রুটি ছিল, সেগুলো দুর করতে। তার জন্য আমরা আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইবো এবং আল্লাহর সাহায্য চাইবো। আমরা যেন চরিত্রবান হতে পারি। যার চরিত্র নেই, তার কোন মূল্য নেই। সকল ধর্মের মূলই হলো চরিত্র সংশোধন করা। সবাই চেষ্টা করবেন নিজেকে চরিত্রবান বানাতে। আপনার ধর্মের যে বিধি-বিধানগুলো আছে, তা মেনে চলবেন, আর নিয়মিত দরবার শরীফে আসবেন।
সকাল ১০টায় অনুষ্ঠান শুরু হলে- প্রথমে আশেকে রাসূলদের মোহাম্মদী ইসলামের ওয়াজিফার তালিম দেওয়া হয়। দুপুর সোয়া ১২টায় জু’মার নামাজের আজানের পর মোহাম্মদী ইসলামের মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। এরপর মোহাম্মদী ইসলামের শিক্ষা ও আদর্শ বাস্তব জীবনে প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে বিশদভাবে আলোচনা করেন- দেওয়ানবাগ শরীফের মহাসচিব, বিশিষ্ট লেখক, গবেষক ও সম্পাদক ডক্টর সৈয়দ এম. সাঈদুর রহমান আল্-মাহবুবী। অতঃপর বেলা দেড়টায় জু’মার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। এরপর সূফী সম্রাট হুজুর কেবলা মাহফিলে সমবেত হাজার হাজার আশেকে রাসূলদের উদ্দেশ্যে বাণী মোবারক প্রদান করে মাহফিলের আখেরী মুনাজাত পরিচালনা করেন। এরপর তিনি নবাগতদের সবক দেন। মাহফিল শেষে সবাই তাবারুক খেয়ে বিদায় নেন।