Saturday, December 7, 2019

বাবে রহমতের সাপ্তাহিক মাহফিলে সূফী সম্রাট


“মহামানবদের জন্মদিন, ওফাতের দিন ও পুনরুত্থানের দিন মানুষের মুক্তির দিন”

মহান সংস্কারক মোহাম্মদী ইসলামের পুনর্জীবনদানকারী সূফী সম্রাট হযরত সৈয়দ মাহবুব-এ-খোদা দেওয়ানবাগী (মাঃ আঃ) হুজুর কেব্লা বলেন, মহামানবদের জন্মদিন, ওফাতের দিন ও পুনরুত্থানের দিন- এই তিনটা দিনে আল্লাহ্ মানুষের মুক্তির ব্যবস্থা করে থাকেন। তিনি গত ৭ই ডিসেম্বর শুক্রবার রাজধানী ঢাকার মতিঝিলের আরামবাগস্থ বাবে রহমত দেওয়ানবাগ শরীফে অনুষ্ঠিত সাপ্তাহিক আশেকে রাসূল (সঃ) মাহ্ফিলে সমবেত হাজার হাজার আশেকে রাসূলের উদ্দেশ্যে বাণী মোবারক দিচ্ছিলেন।
সূফী সম্রাট হুজুর কেবলা বলেন, আল্লাহ্ নবী-রাসূলদের মোজেজা দিয়ে আর অলী-আল্লাহদের কারামত দিয়ে সাহায্য করেন। সমাজের অনেকের ধারণা, যাঁরা অলী-আল্লাহ্, তাঁদের কি আবার অলৌকিকত্ব থাকে? আসলে সেটা আল্লাহর পক্ষ থেকেই ঘটানো হয়। নবুয়তের যুগে যাঁরা নবী-রাসূল হয়ে জগতে এসেছিলেন, আল্লাহ্ তাঁদেরকে অলৌকিক মোজেজা দিয়ে সাহায্য করেছেন। হযরত মুসা (আঃ)-কে আল্লাহ্ নয়টা মোজেজা দিয়েছিলেন। আমাদের রাসূল (সঃ)-এরও অসংখ্য মোজেজা ছিল। সমস্যা হলো- উমাইয়াদের শাসনামলে হযরত রাসূল (সঃ)-এর মোজেজা ধরে রাখার মত লোক তেমন ছিল না।
তিনি বলেন, একদিন আবু জাহেল বলেছিল, ভাতিজা। তুমি যদি এই চাঁদটাকে দ্বিখন্ডিত করতে পার, তাহলে আমি তোমাকে রাসূল স্বীকার করবো এবং ইসলাম গ্রহণ করবো। কারণ আবু জাহেলের ধারণা ছিল, এটাতো কোন মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়। তখন হযরত রাসূল (সঃ) বললেন, ঠিক আছে। তিনি তাঁর শাহাদাত আঙ্গুলী মোবারক দিয়ে ইশারা দিলেন। সাথে সাথে চাঁদ দুই টুকরা হয়ে যায়। উপস্থিত যারা ছিল তারা এঘটনা দেখেছে। আবু জাহেল বলেছিল, মোহাম্মদ! তুমি শেষ পর্যন্ত চাঁদের মাঝে যাদু লাগিয়ে দিলে। এরপরে সে বলে যায়, তার আর ইসলাম গ্রহণ করা হলো না। আসলে যাদের ভাগ্যে হেদায়েত নেই, তাদের এমনই হয়। হযরত রাসূল (সঃ) আরো অসংখ্য অলৌকিক মোজেজা দেখিয়ে ছিলেন। চৌদ্দশত বছর পরে জন্ম নিয়ে আমাদের দেশে এখনো আশেকে রাসূলেরা হযরত রাসূল (ষঃ)-এর মোজেজা দেখতে পায়।
সূফী সম্রাট হুজুর কেবলা বলেন, আমার মোর্শেদের দরবারে আমরা একদিন আসরের নামাজ পড়ে মসজিদ থেকে বের হচ্ছিলাম। এমন সময় হাওলাদার কান্দির ইউছুফ মুন্সী নামে একজন লোক আমার মোর্শেদকে বললেন, বাবাজান! আমার স্ত্রী মারা গেছে। দয়া করে জানাজার নামাজ পড়ার জন্য দরবার থেকে একজন হুজুর পাঠান। বাবাজান আমাকে বললেন, মাহবুব মিয়া! একজন মাওলানা পাঠিয়ে দেন। তাড়াহুড়ার কিছু নেই, মাগরিবের পরে গেলেই চলবে। দরবার শরীফে মহসীন কারী নামে একজন ছিলো। আমি তাকে বললাম, আপনি ঐ গ্রামে গিয়ে তার জানাজার নামাজ পড়িয়ে আসেন। সে জানতে চায়, কখন যেতে হবে? আমি বললাম, এশার নামাজের সময় গেলেই চলবে। মহসীন কারী এশার নামাজের সময় রওয়ানা হলেন- ইউসুফ মুন্সীর বাড়ীর উদ্দেশ্যে। সে ইউসুফ মুন্সীর বাড়ীর কাছে গিয়ে সেখানে মারা যাওয়ার কোন আলামত পায় নাই। একটা মানুষ মারা গেলে সেখানে মানুষ কান্নাকাটি করে। কিন্তু সেই বাড়ীতে এরকম কোন লক্ষন দেখা যায় নাই। মহসীন কারী ভাবলো, আমি কি কোন ভুল সংবাদে এসেছি? তারপরও সে বাড়ীতে প্রবেশ করে দেখে, উঠানের মধ্যে সবাই বসে গল্প করছে। কারী সাহেব যার মৃত্যুর সংবাদে গেলেন, সেই মহিলাও উঠানে বসে অন্যদের সাথে গল্প করছে। এদিকে মায়ের মৃত্যুর সংবাদ পেয়ে ইউসুফ মুন্সীর মেয়ে পার্শ্ববর্তী পিয়াজখালীর শ্বশুরবাড়ী থেকে কাঁদতে কাঁদতে বাড়ীতে আসে। এসে দেখে তার মা সবার সাথে বসে গল্প করছে। এতে মহসীন কারী হতবাক হয়ে জিজ্ঞেসা করে, আসলে ঘটনা কি ঘটেছে? তখন ইউসুফ মুন্সীর স্ত্রী বললো, আমি তো অজ্ঞান হয়ে পড়েছিলাম। এরপর কি হয়েছে জানি না। শুধু দেখেছি, শাহ্ চন্দ্রপুরী এসে আমাকে ডাক দিলেন, এই তুমি উঠো। এরপর আমার জ্ঞান ফিরে আসে। আমি উঠলাম। মহসীন কারী রাত ১১/১২ টার সময় দরবার শরীফে ফিরে এসে এই মৃত মহিলা পুনরায় জীবিত হয়ে উঠার কথা জানালেন। এরকম বহু ঘটনা আমি দেখেছি।
তিনি বলেন, আশেকে রাসূলেরা! অলী-আল্লাহদের কারামত সত্য। তাঁদের কারামত বিশ্বাস করতে হয়। আগেতো আমিও বিশ্বাস করতাম না। কিন্তু চোখের সামনে ঘটলে বিশ্বাস না করে পারা যায় না। কয়েকদিন আগে আমাদের একজন জাকেরের মেয়েকে চিকিৎসার জন্য ইন্ডিয়া নিয়ে যায়। সেখানকার ডাক্তাররা বলে, তার আর বেশী সময় নেই। আপনারা তাড়াতাড়ি বাংলাদেশে নিয়ে যান। ডাক্তারের কথা শুনে মেয়ের করে মা-বাবা কান্নাকাটি বিমানে ঢাকায় এসে সরাসরি আমার দরবার শরীফে এসে পৌঁছায়। মেয়ের বাবা আমার কাছে এসে চিৎকার করে কাঁদতে লাগলো। আমি জানতে চাই, কি হয়েছে? তখন বললো, তার ব্লাড ক্যান্সার। ইন্ডিয়ার ডাক্তাররা বলেছে, তার আর বেশী সময় নেই। আমরা তখন তাকে নিয়ে চলে এসেছি। আমি মেয়েটাকে জিজ্ঞেস করলাম, তোমার কি হয়েছে? সে বলে, আমার ক্যান্সার। তারপর বললো, আমি এক সাপ্তাহ যাবৎ কিছুই খেতে পারি না- এমনকি পানিও না। আমি জানতে চাই, তোমার কি ক্ষুধা লাগে? সে বলে, ক্ষুধাতো লাগে, কিন্তু আমি খেতে পারি না। আমি তার বাবাকে বললাম, আত্মার বাণী পত্রিকা চুবানো পানি ওকে খাওয়ান। পানি খাওয়ার পর সে খাবার খেতে চায়। আমি তাকে তিন তলায় আমাদের বাসার ভিতরে পাঠাই। সেখানে মেয়েটি পেটভরে খাবার খেলো। এরপর সে একদম সুস্থ্য, কোন অসুখ নেই। এরপর খুশিতে বাড়ী চলে যায়। আল্লাহ্র রহমতে মেয়েটি সুস্থ হয়ে গেছে। আমি মেয়েটির নতুন নাম রেখে দিলাম- নূরজাহান। সুতরাং আল্লাহ্ চাইলে কি না হয়। আপনারা বিশ্বাস রাখেন, বিশ্বাসের নাম ঈমান। নিয়মিত দরবার শরীফে আসবেন। তরকিার আমল করবেন। এতেই আল্লাহর সাহায্য পাবেন।
সকাল ১০টায় অনুষ্ঠান শুরু হলে- প্রথমে আশেকে রাসূলদের মোহাম্মদী ইসলামের ওয়াজিফার তালিম দেওয়া হয়। দুপুর সোয়া ১২টায় জু’মার নামাজের আজানের পর মোহাম্মদী ইসলামের মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। অতঃপর বেলা দেড়টায় জু’মার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। এরপর সূফী সম্রাট হুজুর কেবলা মঞ্চে তশরীফ নিয়ে মাহফিলে সমবেত হাজার হাজার আশেকে রাসূলদের উদ্দেশ্যে তিনি বাণী মোবারক প্রদান করে মাহফিলের আখেরী মুনাজাত পরিচালনা করেন। এরপর তিনি নবাগতদের সবক দেন। মাহফিল শেষে সবাই তাবারুক খেয়ে বিদায় নেন।

No comments: