Saturday, February 23, 2019

বাবে রহমতের সাপ্তাহিক মাহফিলে সূফী সম্রাট


হযরত রাসূল (সঃ) মে’রাজে গিয়ে আল্লাহকে দেখেছিলেন

মহান সংস্কারক মোহাম্মদী ইসলামের পুনর্জীবনদানকারী সূফী সম্রাট হযরত সৈয়দ মাহ্বুব-এ-খোদা দেওয়ানবাগী (মাঃ আঃ) হুজুর কেবলা বলেন, আল্লাহ্ নিরাকার নন : তাঁর আকার আছে। হযরত রাসূল (সঃ) মে’রাজে গিয়ে আল্লাহকে দেখেছিলেন, তাঁর সাথে কথা বলেছিলেন। হযরত রাসূল (সঃ) কি নিরাকার আল্লাহর সাথে কথা বলেছিলেন? নিরাকার আল্লাহকে কি দেখেছিলেন? নিশ্চয়ই না। তিনি গত ২৩শে ফেব্রুয়ারী শুক্রবার রাজধানী ঢাকার মতিঝিলের আরামবাগস্থ বাবে রহমত দেওয়ানবাগ শরীফে অনুষ্ঠিত সাপ্তাহিক আশেকে রাসূল (সঃ) মাহফিলে সমবেত হাজার হাজার আশেকে রাসূলের উদ্দেশ্যে বাণী মোবারক প্রদান করছিলেন।
সূফী সম্রাট হুজুর কেবলা বলেন, আমরা মাদ্রাসায় যখন পড়তাম, তখন আমাদের শিক্ষকরা পড়াতেন- হযরত জিব্রাঈল (আঃ) হযরত রাসূল (সঃ)-এর কাছে ওহী নিয়ে এসেছিলেন। এর দলিল বুখারী শরীফের কিতাবুল ঈমানের প্রথম হাদীস। কিন্তু এখন আমরা বলছি, আসলে জিব্রাঈল ফেরেশতা রাসূল (সঃ)-কে শিক্ষা দিতে আসেন নাই। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ্ বলেছেন, “আর রাহমানু আল্লামাল কুরআন” অর্থাৎ- দয়াময় আল্লাহ্ (রাসূল কে) কুরআন শিক্ষা দিয়েছেন। আল্লাহ্ বলেন তিনি নিজে রাসূল (সঃ)-কে কুরআন শিক্ষা দিয়েছেন। অথচ সমাজে প্রচলিত আছে, জিব্রাঈল না-কি শিক্ষা দিয়েছেন। এতেই বুঝা যায়- সমাজের প্রচলিত ধারণা ভুল। আল্লাহ্ নিজেই তাঁর হাবীবকে কুরআন শিক্ষা দিয়েছেন। এদিকে হযরত রাসূল (সঃ) বলেছেন, “বুয়িস্তু মুয়াল্লেমাল” অর্থ- “আমি শিক্ষক রূপে প্রেরিত হয়েছি।” আল্লাহ্ যাঁকে সুশিক্ষিত করে শিক্ষক রূপে প্রেরণ করেছেন। তিনি কেন জিব্রাঈলের কাছে থেকে শিক্ষা গ্রহণ করবেন?
তিনি বলেন, আমরা পবিত্র কুরআনের তাফসীর লিখতে গিয়ে দেখেছি, হাদীসের মধ্যে অসংখ্য জাল হাদীস। তখন আমি কি করবো ভেবে বিব্রতকর অবস্থায় পড়ে গেলাম। এরপর আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীনের দয়ায় সমাধান হয়েছে। আমাকে জানিয়ে দেয়া হলো কুরআনের সাথে যে হাদীসের মিল আছে সেটা গ্রহণ করতে, আর যে হাদীস কুরআনের সাথে মিলে না, সেটা পরিত্যাগ করতে। এরপরে, আমি তাফসীরে যে হাদীসের সাথে কুরআন মিলেছে, সেগুলো গ্রহণ করেছি, আর যে হাদীস কুরআনের সাথে মিলে না, সেটা গ্রহণ করিনি। দেখতে গেলে, বাজারে হাদীসের কিতাব সয়লাব হয়ে গেছে। এর মধ্যে কোনটা রাসূলের হাদীস বুঝা কঠিন। এমতাবস্থায় আমরা কিভাবে হাদীসের উপর আমল করবো? কোরআনের তাফসীরের উপর আমল করবো? তাফসীরের মাঝেও অনেক জাল হাদীস ঢুকে গেছে। হযরত রাসূল (সঃ) পরে ইসলামের চরম শত্রু উমাইয়াইতো ক্ষমতায় এসেছে। উমাইয়াদের ৮৯ বছরের শাসনামলে এরা ক্ষমতায় এসে নিজেদের মত ইসলামের নামে চালিয়ে দিয়েছে। আর মোহাম্মদী ইসলামটা থেকে মোহাম্মদ নামটা কেটে দিয়ে দ্বীন ইসলাম লাগিয়ে দিয়েছে। এখন সারাবিশ্বের মানুষ বলে ইসলামের নাম দ্বীন ইসলাম। প্রশ্ন জাগে হযরত রাসূল (সঃ)-এর নাম কোথায় গেল? এতে বুঝা যায় দ্বীন ইসলামে রাসূল (সঃ) নেই। এটা সোয়াবের ইসলাম। সুতরাং আমাদের জানতে হবে আমরা কিভাবে চলবো। একারণেই তরীকার সাধনা করে আপনি যদি অন্তরদৃষ্টি জাগ্রত করতে পারেন, অন্তরের কান জাগ্রত করতে পারেন, অন্তরের মুখ জাগ্রত করতে পারেন, তখন ফায়েজের মাধ্যমে বুঝতে পারবেন, কোনটা সহিহ হাদীস, আর কোনটা জাল হাদীস।
সূফী সম্রাট হুজুর কেবলা বলেন, সারা দুনিয়ার মানুষ মানে আল্লাহ্ নিরাকার। এই জানাটা কি সত্যি? না। বিধর্মীরা হযরত রাসূল (সঃ)-এর ইসলাম ধ্বংস করার জন্য সক্রিয় ছিল। অথচ হযরত রাসূল (সঃ) সব সময় চেষ্টা করেছেন মানুষ যেন আাল্লাহকে পায়। কিন্তু প্রতিপক্ষ ছলে-বলে-কৌশলে হযরত রাসূল (সঃ)-এর ইসলাম থেকে মানুষকে সরিয়ে দিয়েছে। ফলে বিশ্বে এতো মুসলমান হওয়ার পরও ঐক্যমত নেই। দ্বন্দ্ব,কলহ, মারামারি-কাটাকাটি মুসলমানদের ভিতরেই। আল্লাহর রাসূল (সঃ) বলেছেন, অন্যান্য নবীর উম্মতের মধ্যে বাহাত্তর ফেরকা বা দল; আর আমার উম্মতের মধ্যে তিয়াত্তর ফেরকা বা দল। এদের মধ্যে এক দল বেহেস্তী, আর বাহাত্তর দল জাহান্নামী। আবার এটাও বলেছেন, বাহাত্তর দল জাহান্নামী হলেও তিয়াত্তর দলে মধ্যে প্রত্যেক দলেই আলেম থাকবে। তাহলে আমরা কোন দলে যাবো। সব দলইতো নামাজ পড়ে, রোজা রাখে, হজ্ব করে, যাকাত দেয়।
তিনি বলেন, আমাদের চলতে হবে আল্লাহ্ ও আল্লাহ্র রাসূলের বিধান মোতাবেক। আল্লাহ্ ও আল্লাহর রাসূলের বিধান মেনে চলে অলী আল্লাহ্রা। নতুবা কেউ অলী-আল্লাহ্ হতে পারে না। অলী-আল্লাহ্ হতে হলে তাঁকে হযরত রাসূল (সঃ)-এর উত্তরসূরী হতে হবে। আল্লাহর মনোনীত হতে হবে। কামালিয়াতের সার্টিফিকেটটা দেন আল্লাহ্ পাক নিজে। মোর্শেদ তাকে শিক্ষা দেন; আর হযরত রাসূল (সঃ) এবং আল্লাহ্ তাকে পুরুস্কৃত করেন। সুতরাং মনোযোগ দিয়ে তরীকার কাজ করেন এবং আল্লাহ্ সম্বন্ধে জানেন।
সকাল ১০টায় অনুষ্ঠান শুরু হলে- প্রথমে আশেকে রাসূলদের মোহাম্মদী ইসলামের ওয়াজিফার তালিম দেওয়া হয়। দুপুর সোয়া ১২টায় জু’মার নামাজের আজানের পর মোহাম্মদী ইসলামের মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। অতঃপর বেলা দেড় টায় জু’মার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। এরপর সূফী সম্রাট হুজুর কেবলা মাহফিলে সমবেত হাজার হাজার আশেকে রাসূলদের উদ্দেশ্যে বাণী মোবারক প্রদান করে মাহফিলের আখেরী মুনাজাত পরিচালনা করেন। এরপর তিনি নবাগতদের মোহাম্মদী ইসলামের সবক দেন। মাহফিল শেষে সবাই তাবারুক খেয়ে বিদায় নেন।

No comments: