Saturday, January 11, 2020

বাবে রহমতের সাপ্তাহিক মাহফিলে সূফী সম্রাট

“নিয়মিত ওয়াজিফার আমল করলে আল্লাহর দয়া পেতে সুবিধা হবে”

মহান সংস্কারক মোহাম্মদী ইসলামের পুনর্জীবনদানকারী সূফী সম্রাট হযরত সৈয়দ মাহবুব-এ-খোদা দেওয়ানবাগী (মাঃ আঃ) হুজুর কেবলা বলেন, আশেকে রাসূলেরা! নিয়মিত তরীকার ওয়াজিফাটা আমল করেন। এই ওয়াজিফা আপনাকে আল্লাহর দয়া পেতে সাহায্য করবে। তিনি গত ১১ জানুয়ারী, শুক্রবার রাজধানী ঢাকার মতিঝিলের আরামবাগস্থ বাবে রহমত দেওয়ানবাগ শরীফে সাপ্তাহিক আশেকে রাসূল (সঃ) মাহফিলে সমবেত হাজার হাজার আশেকে রাসূলের উদ্দেশ্যে বাণী মোবারক দিচ্ছিলেন।
সূফী সম্রাট হুজুর কেবলা বলেন, হযরত আদম (আঃ) থেকে এই পর্যন্ত পৃথিবীতে যত মানুষ এসেছে, যত মুনি, ঋষি, নবী-রাসূল, গাউস কুতুব এসেছেন। সবাই আবার পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছেন। সবাই চলে যাবে এটাই আল্লাহর বিধান। এই দুনিয়াটা আমাদের জন্য একটা পরীক্ষা কেন্দ্র। আল্লাহ্ এখানে আমাদের পাঠিয়ে ঈমানের পরীক্ষা নেন। পৃথিবীতে পাঠিয়ে বিভিন্ন সমস্যায় ফেলে পরীক্ষা নেন। পাশ করলে মুমিন, আর ফেল করলে লাইনচ্যুত হয়ে যায়। যত নবী রাসূল, অলী-আল্লাহ্ এসেছেন, তাঁদেরও পরীক্ষা হয়েছে। তাঁদের অনুসারীদেরকেও পরীক্ষায় পড়তে হয়েছে। ঐ পরীক্ষায় যারা টিকতে পেরেছে, তারা মুমিন হয়ে প্রমোশন পেয়েছেন। আর যারা টিকতে পারেনি, তারা আবার ফেঁসে গেছে।
তিনি বলেন, মৃত্যু কখনো ফোন করে বা টেলিগ্রাম করে আসে না। নির্দিষ্ট সময় হলে দেখবেন গ্রাস করে ফেলেছে। মানুষের শিক্ষা দীক্ষা কোন কিছুই মৃত্যুর সময় সাহায্য করতে পারে না। যদি কেউ ঈমানী পরীক্ষায় পাশ করতে পারে, তখন সে আল্লাহর দয়া পায়, রাসূলের দয়া পায়, ঈমানের সাথে জগত থেকে বিদায় নিতে পারে। আমরা জাকেরদের যে শিক্ষা দিচ্ছি, সেটা হলো- সে কিভাবে ঈমানের সাথে মৃত্যুবরণ করবে। এই কারণে ক্বালবে জ্বিকিরের শিক্ষা দেই। সমাজের হুজুরেরা তো বিশ্বাসই করে না যে, মানুষের ক্বালবে জ্বিকির হতে পারে। কিন্তু আপনারা যারা তরীকা নিয়েছেন, তারা বুঝতে পারেন। এখন দেখেন, আপনাদের সাথে হুজুরদের কত পার্থক্য। অথচ তারা নাকি নায়েবে রাসূল। পবিত্র কুরআনে অতীতের নবী-রাসূলদের জীবনে কি কি ঘটনা ঘটেছে, সেগুলো বর্ণনা করা হয়েছে। তাঁরা যেসমস্ত বাঁধার সম্মুখীন হয়েছেন, সেগুলো যদি আপনারা জানেন, তা আপনাদের সাহায্য করবে। আপনারা বুঝতে পারবেন যে, তারা তখন ভালো অবস্থায় ছিলেন না। যাঁরা ইসলাম গ্রহণ করেছে, তাঁরা চরমভাবে নির্যাতিত হয়েছে।
সূফী সম্রাট হুজুর কেবলা বলেন, হযরত রাসূল (সঃ)-এর পরিবারবর্গ সারা জগতবাসীর কাছে শ্রদ্ধার পাত্র। কিন্তু এরপরেও হযরত রাসূল (সঃ)-এর প্রিয় দৌহিত্র ইমাম হাসান (রাঃ) ও ইমাম হোসাইন (রাঃ)-কে নির্মমভাবে শহীদ করা হয়েছে। এইভাবে অতীতের নবী, রাসূলদেরকে চরমভাবে নির্যাতন করে শহীদ করা হয়েছে। আজকে বিশ্বের সব দেশের মুসলমানরা গাউসে পাক হযরত আবদুল কাদের জিলানী (রহঃ)-কে বড়পীর বলে শ্রদ্ধা করে, সম্মানের সাথে তাঁর নাম নেয়। অথচ তিনিও চরমভাবে নির্যাতিত, নিষ্পোষিত হয়েছিলেন।
তিনি বলেন, আশেকে রাসূলেরা! এতে আপনাদের দুঃখ পাবার কিছুই নেই। আপনি যখন আল্লাহর কথা বলবেন, তখন আপনার উপর ঝড় আসবেই। কোন নবী- কোন রাসূল স্বাভাবিকভাবে জগত থেকে বিদায় হয়নি। কুল কায়েনাতের রহমত রাহমাতাল্লিল আলামীন রাতের আঁধারে, মক্কা হতে মদীনায় হিজরত করেছিলেন। মদীনায় যাওয়ার পরেও ঐ জালেমরা রাসূল (সঃ)-এর উপরে আক্রমণ করেছে। বদর, ওহুদ যুদ্ধে শত শত সাহাবীকে হত্যা করেছে। এখনতো কিছু হলেই আমরা বলি, এটা একটা কারামত দেখিয়ে ঠিক করে দিতে পারে না? হযরত রাসূল (সঃ) তো কারামত দেখিয়ে ঠিক করেন নি। আল্লাহর পক্ষ থেকে যাদেরকে ঈমানদার করবেন, তাদেরকে হয়তো রাসূল (সঃ) সাহায্য করেছেন। সুতরাং মহব্বতের সাথে তরীকার কাজ করেন, আল্লাহর দয়া পেলে ঈমানের উপর কায়েম থাকতে পারবেন। আল্লাহর দয়া ছাড়া কোন মানুষই ঈমানদার হতে পারে না। মনোযোগ দিয়ে তরীকার কাজ করেন, আল্লাহ্ দয়া করে সাহায্য করবেন।
সকাল ১০টায় অনুষ্ঠান শুরু হলে- প্রথমে আশেকে রাসূলদের মোহাম্মদী ইসলামের ওয়াজিফার তালিম দেওয়া হয়। দুপুর সোয়া ১২টায় জু’মার নামাজের আজানের পর মোহাম্মদী ইসলামের মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। এরপর বেলা দেড়টায় জু’মার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। অতঃপর সূফী সম্রাট হুজুর কেবলা মাহফিলে সমবেত হাজার হাজার আশেকে রাসূলদের উদ্দেশ্যে বাণী মোবারক প্রদান করে মাহফিলের আখেরী মুনাজাত পরিচালনা করেন। এরপর তিনি নবাগতদের সবক দেন। মাহফিল শেষে সবাই তাবারুক খেয়ে বিদায় নেন।

Saturday, January 4, 2020

বাবে রহমতের সাপ্তাহিক মাহফিলে সূফী সম্রাট


“জীবনের সময় থাকতেই ধর্ম শিখতে হয়”

মহান সংস্কারক মোহাম্মদী ইসলামের পুনর্জীবনদানকারী সূফী সম্রাট হযরত সৈয়দ মাহবুব-এ-খোদা দেওয়ানবাগী (মাঃ আঃ) হুজুর কেবলা বলেন, আমাদের জীবনের সময় থাকতেই ধর্ম শিখতে হয়। আজ নববর্ষের প্রথম শুক্রবার। হিসেব করে দেখেন আমাদের জীবনে কতগুলো বছর শেষ হয়ে গেছে। সমাজে একটা কথার প্রচলন আছে, চল্লিশ বছরের পরে মুরিদ হতে হয়। যারা মুরিদ হয়নি, তারা কেউ কেউ বলে, আমাদের সময় এখনো শেষ হয়ে যায়নি, চল্লিশের পরে আমরা মুরিদ হবো। চল্লিশের পরে মুরিদ হয়ে তরীকা শিখবো। এটা হলো আমাদের অবহেলার কারণে। ধর্মের প্রতি আমাদের আকর্ষণ না থাকার কারণে। তিনি গত ৪ঠা জানুয়ারী, শুক্রবার রাজধানী ঢাকার মতিঝিলের আরামবাগস্থ বাবে রহমত দেওয়ানবাগ শরীফে সাপ্তাহিক আশেকে রাসূল (সঃ) মাহফিলে সমবেত হাজার হাজার আশেকে রাসূলের উদ্দেশ্যে বাণী মোবারক দিচ্ছিলেন।
সূফী সম্রাট হুজুর কেবলা বলেন, রাব্বুল আলামীনের অসীম দয়ায় আমাদের এখানে ছোট বাচ্চা থেকে শুরু করে যুবক ছেলেরা তরীকা নেয়। মনে রাখতে হবে- আমাদের জীবন থেকে এত বছর শেষ হয়ে গেছে। সেই দিন আর আমরা ফেরত আনতে পারবো না। এখন থেকে আমাদের এমনভাবে কাজ করতে হবে, আমরা যেন ঈমানের উপর, হযরত রাসূল (সঃ)-এর মহব্বতের উপর কায়েম থাকতে পারি।
তিনি বলেন, নবী-রাসূলগণ নিজে নিজের অনুসারীদের জন্য সাপ্তাহে একদিন ইবাদতের দিন হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন। হযরত রাসূল (সঃ) ইবাদতের দিন হিসেবে জু’ম্মার দিন শুক্রবার দিনকে বেছে নিয়েছেন। হযরত রাসূল (সঃ)-এর যুগে নবীজির পাড়া-প্রতিবেশী মুসলমানরা প্রতিদিন তাঁর সোহবতে আসতেন। আর যারা দূরে ছিলেন, তাদের পক্ষে প্রতিদিন আসা সম্ভব ছিল না। তাই তাদের জন্য হযরত রাসূলে পাক (সঃ) শুক্রবার জু’ম্মার দিনে জমায়েত বা একত্রিত হতে বলেছেন। ঐদিন সকলে থেকেই সাহাবায়ে কেরাম নবীজির দরবার শরীফে এসে বিভিন্ন কাজে খেদমত করতেন। সাহাবীরা খেদমত করার পরে হযরত রাসূল (সঃ) যখন বানী মোবারক রাখতেন, এর আগে জু’ম্মার সানি আজান বা দ্বিতীয় আজান দেয়া হতো। ঐ আজানের পরে সাহাবীরা কাজকর্ম ছেড়ে দিয়ে মসজিদে ঢুকতেন। হযরত রাসূল (সঃ) সানি খুৎবা দিতেন। সেই খুৎবা ছিল নসিহতের খুৎবা। মুসলমানরা কিভাবে আরেক সপ্তাহ চলবে সেই কথা। সুতরাং সেই খুৎবা ধারাবাহিকভাবে আজও চলে এসেছে।
সূফী সম্রাট হুজুর কেব্লা বলেন, হুজুররা বলে ছবি তোলা জায়েজ নয়, ছবি তোলা হারাম। যে ঘরে ছবি থাকে, সেই ঘরে রহমতের ফেরেশতা ঢুকে না। আপনি এক হুজুরকে দাওয়াত করলেন। দাওয়াতে এসে যদি সেখানে ছবি দেখে সে নিজেই ছবিটা উল্টে দিবে, যাতে তার নজরে না পড়ে। আসলে এদের ধর্ম সম্বন্ধে জ্ঞান নেই। তারা বলে, যে ঘরে ছবি থাকে সেই ঘরে রহমতের ফেরেশতা ঢুকে না। আমরা যদি বলি, পবিত্র কুরআনে বর্ণিত হয়েছে আসহাবে কাহাফের সাথে “কিতমির” নামে যে কুকুরটা ছিল, সেই কুকুরটাও জান্নাতি। তখন যদি প্রশ্ন করা হয়, যে ঘরে কুকুর ঢুকে ঐ ঘরে যদি রহমতের ফেরেশতা থাকে না, তবে আসহাবে কাহাফের কুকুরটা জান্নাতে প্রবেশ করলে কি বেহেশত থেকে সব ফেরেশতা বের হয়ে যাবে? আসলে ধর্ম সম্বন্ধে না জানার কারণে এই ভুলগুলো হচ্ছে।
তিনি বলেন, আমরা কুরআন শরীফ পড়লে দেখবো, সকল নবীদের ধর্মের কথা এখানে আছে। আমরা কুরআন সহি শুদ্ধভাবে পড়লাম। কিন্তু এর অর্থ বুঝলাম না, এতে কি লাভ? আল্লাহ্ কোরআনে যা নির্দেশ করেছেন, আমাদের সেই নির্দেশটা পালন করতে হবে। এইভাবে অজ্ঞতার মধ্যে আমাদেরকে ছেড়ে দিয়ে মূল ধর্ম থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। আমরা কায়দায় পড়েছি, “আমানতু বিল্লাহি ওয়া মালাইকাতিহি ওয়া কুতুবিহি ওয়া রাসূলিহি’” অর্থাৎ- আমরা বিশ্বাস স্থাপন করলাম আল্লাহর উপর, ফেরেশতাদের উপর, আসমানী কিতাবের উপর, আল্লাহর রাসূলদের উপর।” অথচ আমরা বাস্তব জীবনে এগুলো মানতে চাই না।
সূফী সম্রাট হুজুর কেবলা বলেন, হযরত রাসূল (সঃ)-এর জন্মের ৫৭০ বছর আগে হযরত ঈসা (আঃ)-এর জন্ম। আমরা ঈসা (আঃ)-এর সনটাকে মানছি। অথচ আমাদের ইসলামী ক্যালেন্ডার সম্বন্ধে খবর রাখি না। হযরত ওমর (রাঃ)-এর খেলাফত কালে মুসলমানদের নিজস্ব ক্যালেন্ডারের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। বিশিষ্ট সাহাবীদের নিয়ে তিনি পরামর্শে বসেন। বিভিন্ন জনে বিভিন্ন রকম প্রস্তাব দেয়। কিন্তু হযরত আলী (রাঃ) দীর্ঘ ভাষণ দিয়ে বুঝালেন, হিজরত হতে সন গণনা করলে আমাদের ভাল হবে। এরপর মুসলমানদের এই ক্যালেন্ডারের নাম হয় হিজরী ক্যালেন্ডার।
তিনি বলেন, ইংরেজী নববর্ষ সারা বিশ্বে পালন করা হচ্ছে। অথচ মুসলমানদের হিজরী পঞ্জিকার প্রথম মাস মহররম পালনে আমাদের তেমন কোন ধুমধাম নেই। এর কারণ ধর্ম সম্বন্ধে না জানা। আমরা ধর্মকর্ম করি, কিন্তু আমাদের ধর্ম সম্বন্ধে অনেক কিছুই জানা নেই। এসম্বন্ধে আমাদের জানতে হবে এবং কোরআন শিক্ষা করতে হবে। আজকে আমাদের শপথ হোক, আমাদের প্রতিজ্ঞা হোক আমরা যেন আল্লাহর ধর্মকে আঁকড়ে ধরি। আল্লাহর ধর্মকে যদি আকড়ে ধরতে না পারি, তবে আমরা আল্লাহকে পাবো কিভাবে? আশেকে রাসূলেরা! আমাদের জীবন থেকে অনেক বছর শেষ হয়েছে। আবার নতুন বছর শুরু হয়েছে। চেষ্টা করবেন আমাদের জীবনে যে সমস্ত দোষ-ত্রুটি ছিল, সেগুলো দুর করতে। তার জন্য আমরা আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইবো এবং আল্লাহর সাহায্য চাইবো। আমরা যেন চরিত্রবান হতে পারি। যার চরিত্র নেই, তার কোন মূল্য নেই। সকল ধর্মের মূলই হলো চরিত্র সংশোধন করা। সবাই চেষ্টা করবেন নিজেকে চরিত্রবান বানাতে। আপনার ধর্মের যে বিধি-বিধানগুলো আছে, তা মেনে চলবেন, আর নিয়মিত দরবার শরীফে আসবেন।
সকাল ১০টায় অনুষ্ঠান শুরু হলে- প্রথমে আশেকে রাসূলদের মোহাম্মদী ইসলামের ওয়াজিফার তালিম দেওয়া হয়। দুপুর সোয়া ১২টায় জু’মার নামাজের আজানের পর মোহাম্মদী ইসলামের মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। এরপর মোহাম্মদী ইসলামের শিক্ষা ও আদর্শ বাস্তব জীবনে প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে বিশদভাবে আলোচনা করেন- দেওয়ানবাগ শরীফের মহাসচিব, বিশিষ্ট লেখক, গবেষক ও সম্পাদক ডক্টর সৈয়দ এম. সাঈদুর রহমান আল্-মাহবুবী। অতঃপর বেলা দেড়টায় জু’মার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। এরপর সূফী সম্রাট হুজুর কেবলা মাহফিলে সমবেত হাজার হাজার আশেকে রাসূলদের উদ্দেশ্যে বাণী মোবারক প্রদান করে মাহফিলের আখেরী মুনাজাত পরিচালনা করেন। এরপর তিনি নবাগতদের সবক দেন। মাহফিল শেষে সবাই তাবারুক খেয়ে বিদায় নেন।

Saturday, December 14, 2019

পবিত্র জন্মবার্ষিকীর সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে সূফী সম্রাট


“মায়ের উদরে চার মাস বয়সে মানুষের ভাগ্য লিপিবদ্ধ করা হয়”

বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনা ও ধর্মীয় ভাবগাম্বির্য্যরে মধ্য দিয়ে গত ১৪ই ডিসেম্বর, শুক্রবার মহান সংস্করক মোহাম্মদী ইসলামের পুনর্জীবনদানকারী সূফী সম্রাট হযরত সৈয়দ মাহবুব-এ-খোদা দেওয়ানবাগী (মাঃ আঃ) হুজুর কেবলার ৬৯তম শুভ জন্মদিন দেশে-বিদেশে নানাবিদ কর্মসূচীর মাধ্যমে উদযাপন করা হয়। এ উপলক্ষে কেন্দ্রীয়ভাবে রাজধানী ঢাকার মতিঝিলের বাবে রহমত দেওয়ানবাগ শরীফে আয়োজন করা হয় এক বিশেষ সংবর্ধনা অনুষ্ঠান। সকাল হতে বাদ জুম্মা পর্যন্ত অনুষ্ঠিত এ সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বাণী মোবারক প্রদানকালে সূফী সম্রাট হযরত দেওয়ানবাগী (মাঃ আঃ) হুজুর কেবলা বলেন, আজ থেকে ঊনসত্তর বছর পূর্বে আমার জন্ম হয়েছে। আল্লাহর রাসূলের পক্ষ থেকে জানা যায়, আমরা যখন চার মাস বয়সে মায়ের উদরে থাকি, তখনই আল্লাহর পক্ষ থেকে একজন ফেরেশতা পাঠানো হয় তার ভাগ্য লিখার জন্য। ফেরেশতা এসে তার ভাগ্য লিপিবদ্ধ করে দেয়। কতদিন সে দুনিয়াতে বেঁচে থাকবে; সে বেশী জ্ঞানী হবে, না কম জ্ঞানী হবে- আল্লাহর পক্ষ থেকে লিখে দেয়া হয়। এই হিসেবে যদি আমরা পিছনের দিকে তাকাই দেখতে পাবো- আমাদের হায়াতে জিন্দেগী হতে ঊনসত্তরটি বছর বিদায় হয়ে গেছে। আর কতদিন রাব্বুল আলামীন আমাদেরকে তাঁর এই জগতে থাকার সুযোগ দিবেন, তিনিই ভাল জানেন।

সূফী সম্রাট হুজুর কেবলা বলেন, সবাই চেষ্টা করেন, যেন আল্লাহতে পূর্ণ ঈমানদার হতে পারেন। মুসলিম বিশ্বে দেখেন, মুসলমানদের মধ্যে ফেতনা অনেক। হযরত রাসূল (সঃ) বলেন, অন্যান্য নবীদের মধ্যে ছিল ৭২ ফেরকা বা দল। আর আমার উম্মতের মধ্যে ৭৩ ফেরকা বা দল। এর মধ্যে ৭২ ফেরকা জাহান্নামী। আর একটা দল বেহেশতী। সুতরাং আমাদের ঠিকানা খুঁজে বের করতে হবে। আমাদের আল্লাহর পরিচয় জানতে হবে, রাসূলের পরিচয় জানতে হবে।
তিনি বলেন, হযরত রাসূল (সঃ) ফরমান, মৃত্যুর সময় আমাদেরকে তিনটা প্রশ্ন করা হবে- মার রাব্বুকা? ওয়ামা দ্বীনুকা? ওয়ামান নাবীয়্যুকা? অর্থাৎ- তোমার প্রভু কে? তোমার ধর্ম কি? তোমার নবী কে? আপনি যদি প্রশ্নের সঠিক জবাব দিতে পারেন, তবে ঈমান নিয়ে কবরে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে। আর জবাব দিতে না পারলে তো আপনি ফেল। সুতরাং দুনিয়াতে থেকেই আল্লাহকে পেতে হবে এবং আল্লাহর সাথে যোগাযোগ করতে হবে। পৃথিবীতে যত নবী, রাসূল ও অলী-আল্লাহ্ এসেছেন, তাঁরা সবাই সাধনা করে আল্লাহকে পেয়েছেন।
সূফী সম্রাট হুজুর কেবলা বলেন, আমাদের ধর্ম সম্বন্ধে সঠিক ধারণা নেই। আমরা মনে করি- মাদ্রাসায় লেখাপড়া করলে নায়েবে রাসূল হওয়া যায়। নায়েবে রাসূল হতে হলে মাদ্রাসায় পড়তে হয়। আমি মাদ্রাসায় পড়ে দেখেছি, কতটুকু নায়েবে রাসূল হয়েছি। পরে মোর্শেদের দরবারে ১২ বছর গোলামী করে ঈমানদার হতে পেরেছি। সুতরাং নবুয়তের যুগে মানুষ নবী-রাসূলের সাহচর্যে গিয়ে যেমন আল্লাহকে পেয়েছেন, তেমনি এ যুগে নায়েবে রাসূল অলী-আল্লাহদের সাহচর্যে গিয়ে গোলামী করে নিজের ভিতরে দোষ-ক্রুটি দূর করে আল্লাহকে পেতে হবে। আল্লাহকে যদি পান, তবে আপনি মুমেন। হাদীস শরীফে বলা হয়েছে, “আসসালাতু মিরাজুল মু’মিনীন”- নামাজ হলো মুমিনদের মে’রাজ। যিনি মু’মেন, নামাজে তাঁর সাথে আল্লাহর দীদার হয়। তিনি আল্লাহকে দেখে সেজদা করতে পারেন।
তিনি বলেন, আল্লাহকে দেখার কথা বললে- এক শ্রেণীর লোকেরা বলেন, মুসা (আঃ) নবী হয়েও তো আল্লাহকে দেখে নাই। যদি তাকে প্রশ্ন করেন, আপনি কি মুসা (আঃ)-এর উম্মত? সকল নবীরাই আল্লাহকে দেখেছেন। আমরা তো এখন আল্লাহকে দেখতেও চাই না। আল্লাহকে দেখলে যদি ঈমান চলে যায়, তবে কাকে দেখলে ঈমানদার হবে? শয়তানকে দেখলে কি মানুষ ঈমানদার হয়? সুতরাং সাধনা করে আপনার মালিক আল্লাহকে চিনেন। আল্লাহকে না চিনলে প্রতিনিধিত্ব করা যায় না। আমরা আগে জানতাম, আল্লাহ্ নিরাকার। কিন্তু সাধনার জীবনে এসে রাব্বুল আলামীনের অশেষ দয়ায় যখন রাব্বুল আলামীনের দেখার খোশ নছিব হয়েছে, কথা বলার সুযোগ হয়েছে, তখন বুঝতে পেরেছি, আল্লাহ্ নিরাকার নয়। এরপরে চিন্তা করলাম, আল্লাহর এই মহা সত্যটা প্রকাশ করতে হবে। দীর্ঘ সাধনার পর আল্লাহর বাণী এবং হযরত রাসূল (সঃ)-এর বাণী দিয়ে আমি আট খণ্ডে ‘তাফসীরে সূফী সম্রাট দেওয়ানবাগী’ লিখেছি। আপনারা তাফসীর পড়ে দেখেন, আমরা পবিত্র কোরআন ও হাদীসের বাইরে একটা কথাও লিখি নাই। আশ্চর্যের ব্যাপার হলো- আমরা ত্রিশ পাড়া কোরআনকে তন্ন তন্ন করে খুঁজে দেখেছি, আল্লাহ্ নিরাকার এমন একটা আয়াতও পাই নাই। আমরা মস্ত বড় একটা ভুলে ছিলাম। রাব্বুল আলামীনের দয়ায় আমাদের এই ভুলটা সংশোধন হয়েছে। আপনারা তাফসীর পড়ে দেখেন। সবগুলো কোরআনের আয়াত আমরা সাজিয়ে লিখে দিয়েছি। আল্লাহর বাণী, রাসূলের বর্ণনা দিয়ে তাফসীর সমাপ্ত করেছি।
সূফী সম্রাট হুজুর কেবলা বলেন, আল্লাহ্ আমাদের মালিক, রাসূল আমাদের সাফায়েতকারী। অথচ তাঁদের সম্বন্ধে আমাদের সঠিক ধারণা নেই। আমরা মনে করি- আল্লাহ্ নিরাকার, আর রাসূল (সঃ) গরীব ছিলেন। হযরত রাসূল (সঃ)-এর দাদা ছিলেন মক্কার শাসনকর্তা, আর হযরত রাসূল (সঃ) ছিলেন মদীনার শাসনকর্তা। মদীনার শাসন কর্তা কি সত্তর তালি জামা পড়ে সিংহাসনে বসতেন? এসব উল্টা-পাল্টা ধারনা সৃষ্টি হয়েছে হযরত রাসূল (সঃ) সম্বন্ধে সঠিক জ্ঞান না থাকার কারনে। সুতরাং আমাদের সবার আল্লাহ্ ও হযরত রাসূল (সঃ) সম্বন্ধে সঠিক ধারণা থাকা উচিৎ। আপনারা মনোযোগ দিয়ে সাধনা করেন যেন আল্লাহ্ ও হযরত রাসূল (সঃ)-কে পেতে পারেন।
সকাল ৮টায় পবিত্র কুরআন তেলাওয়াত ও মিলাদ মাহফিলের মাধ্যমে অনুষ্ঠান শুরু হয়। অতঃপর স্বাগত ভাষন দেন দেওয়ানবাগ শরীফের মহাসচিব ডক্টর সৈয়দ এম. সাঈদুর রহমান আল মাহবুবী। এরপর হামদ, নাতে রাসূল ও শানে মোর্শেদ পরিবেশিত হয়। সকাল ১১টায় সূফী সম্রাট হুজুর কেবলা পবিত্র জন্মদিন উপলক্ষে একটি বিশাল বড় কেক কাটেন, ‘সূফী সম্রাট’ নামক স্মরণিকা মোড়ক উন্মোচন করেন এবং দেওয়ানবাগ শরীফের একটি নতুন সোস্যাল মিডিয়া প্লাটফর্ম ‘দোস্তাম’-এর উদ্বোধন করেন। এরপর বাবে রহমত ভবনের ১০ তলার ছাদ থেকে সূফী সম্রাটের পবিত্র জন্মদিনের বেলুন উড়ানো হয়। এরপর দুপুর সোয়া ১২টায় জুম্মার নামাজের আজানের পর জ্যেষ্ঠ সাহেবজাদা ইমাম ড. সৈয়দ এ.এফ.এম. নূর-এ-খোদা, মেজো সাহেবজাদা ইমাম ড. আরসাম কুদরত-এ-খোদা ও ছোট সাহেবজাদা ইমাম ড. সৈয়দ এ.এফ.এম. মঞ্জুর-এ-খোদা বক্তব্য রাখেন। বেলা পৌঁনে দুইটায় আশেকে রাসূল ও মুক্তিকামী মানুষ জুম্মার নামাজ আদায় করেন। এরপর সূফী সম্রাট হুজুর কেবলা মঞ্চে তশরীফ নিলে সমস্ত আশেকে রাসূলদের পক্ষ থেকে তাঁকে পুষ্পমাল্য প্রদান করেন ইমাম ড. সৈয়দ এ.এফ.এম. নূর-এ-খোদা। অতঃপর তিনি বাণী মোবারক দেয়ার পর সবার ইহকালের শান্তি ও পরকালের মুক্তি কামনা করে আখেরী মুনাজাত পরিচালনা করেন। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন- সেজো সাহেবজাদা ইমাম ড. সৈয়দ এ.এফ.এম. ফজল-এ-খোদা, জ্যেষ্ঠ দৌহিত্র ডক্টর সৈয়দ এ.এফ.এম. বরকত-এ-খোদা ও সৈয়দ এ.এফ.এম. রহমত-এ-খোদাসহ দেশের গণ্য মান্য ও নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গ। সম্মেলনে আগত মেহমানদের বিরিয়ানীর প্যাকেট ও কেক দেয়া হয়।

Saturday, December 7, 2019

বাবে রহমতের সাপ্তাহিক মাহফিলে সূফী সম্রাট


“মহামানবদের জন্মদিন, ওফাতের দিন ও পুনরুত্থানের দিন মানুষের মুক্তির দিন”

মহান সংস্কারক মোহাম্মদী ইসলামের পুনর্জীবনদানকারী সূফী সম্রাট হযরত সৈয়দ মাহবুব-এ-খোদা দেওয়ানবাগী (মাঃ আঃ) হুজুর কেব্লা বলেন, মহামানবদের জন্মদিন, ওফাতের দিন ও পুনরুত্থানের দিন- এই তিনটা দিনে আল্লাহ্ মানুষের মুক্তির ব্যবস্থা করে থাকেন। তিনি গত ৭ই ডিসেম্বর শুক্রবার রাজধানী ঢাকার মতিঝিলের আরামবাগস্থ বাবে রহমত দেওয়ানবাগ শরীফে অনুষ্ঠিত সাপ্তাহিক আশেকে রাসূল (সঃ) মাহ্ফিলে সমবেত হাজার হাজার আশেকে রাসূলের উদ্দেশ্যে বাণী মোবারক দিচ্ছিলেন।
সূফী সম্রাট হুজুর কেবলা বলেন, আল্লাহ্ নবী-রাসূলদের মোজেজা দিয়ে আর অলী-আল্লাহদের কারামত দিয়ে সাহায্য করেন। সমাজের অনেকের ধারণা, যাঁরা অলী-আল্লাহ্, তাঁদের কি আবার অলৌকিকত্ব থাকে? আসলে সেটা আল্লাহর পক্ষ থেকেই ঘটানো হয়। নবুয়তের যুগে যাঁরা নবী-রাসূল হয়ে জগতে এসেছিলেন, আল্লাহ্ তাঁদেরকে অলৌকিক মোজেজা দিয়ে সাহায্য করেছেন। হযরত মুসা (আঃ)-কে আল্লাহ্ নয়টা মোজেজা দিয়েছিলেন। আমাদের রাসূল (সঃ)-এরও অসংখ্য মোজেজা ছিল। সমস্যা হলো- উমাইয়াদের শাসনামলে হযরত রাসূল (সঃ)-এর মোজেজা ধরে রাখার মত লোক তেমন ছিল না।
তিনি বলেন, একদিন আবু জাহেল বলেছিল, ভাতিজা। তুমি যদি এই চাঁদটাকে দ্বিখন্ডিত করতে পার, তাহলে আমি তোমাকে রাসূল স্বীকার করবো এবং ইসলাম গ্রহণ করবো। কারণ আবু জাহেলের ধারণা ছিল, এটাতো কোন মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়। তখন হযরত রাসূল (সঃ) বললেন, ঠিক আছে। তিনি তাঁর শাহাদাত আঙ্গুলী মোবারক দিয়ে ইশারা দিলেন। সাথে সাথে চাঁদ দুই টুকরা হয়ে যায়। উপস্থিত যারা ছিল তারা এঘটনা দেখেছে। আবু জাহেল বলেছিল, মোহাম্মদ! তুমি শেষ পর্যন্ত চাঁদের মাঝে যাদু লাগিয়ে দিলে। এরপরে সে বলে যায়, তার আর ইসলাম গ্রহণ করা হলো না। আসলে যাদের ভাগ্যে হেদায়েত নেই, তাদের এমনই হয়। হযরত রাসূল (সঃ) আরো অসংখ্য অলৌকিক মোজেজা দেখিয়ে ছিলেন। চৌদ্দশত বছর পরে জন্ম নিয়ে আমাদের দেশে এখনো আশেকে রাসূলেরা হযরত রাসূল (ষঃ)-এর মোজেজা দেখতে পায়।
সূফী সম্রাট হুজুর কেবলা বলেন, আমার মোর্শেদের দরবারে আমরা একদিন আসরের নামাজ পড়ে মসজিদ থেকে বের হচ্ছিলাম। এমন সময় হাওলাদার কান্দির ইউছুফ মুন্সী নামে একজন লোক আমার মোর্শেদকে বললেন, বাবাজান! আমার স্ত্রী মারা গেছে। দয়া করে জানাজার নামাজ পড়ার জন্য দরবার থেকে একজন হুজুর পাঠান। বাবাজান আমাকে বললেন, মাহবুব মিয়া! একজন মাওলানা পাঠিয়ে দেন। তাড়াহুড়ার কিছু নেই, মাগরিবের পরে গেলেই চলবে। দরবার শরীফে মহসীন কারী নামে একজন ছিলো। আমি তাকে বললাম, আপনি ঐ গ্রামে গিয়ে তার জানাজার নামাজ পড়িয়ে আসেন। সে জানতে চায়, কখন যেতে হবে? আমি বললাম, এশার নামাজের সময় গেলেই চলবে। মহসীন কারী এশার নামাজের সময় রওয়ানা হলেন- ইউসুফ মুন্সীর বাড়ীর উদ্দেশ্যে। সে ইউসুফ মুন্সীর বাড়ীর কাছে গিয়ে সেখানে মারা যাওয়ার কোন আলামত পায় নাই। একটা মানুষ মারা গেলে সেখানে মানুষ কান্নাকাটি করে। কিন্তু সেই বাড়ীতে এরকম কোন লক্ষন দেখা যায় নাই। মহসীন কারী ভাবলো, আমি কি কোন ভুল সংবাদে এসেছি? তারপরও সে বাড়ীতে প্রবেশ করে দেখে, উঠানের মধ্যে সবাই বসে গল্প করছে। কারী সাহেব যার মৃত্যুর সংবাদে গেলেন, সেই মহিলাও উঠানে বসে অন্যদের সাথে গল্প করছে। এদিকে মায়ের মৃত্যুর সংবাদ পেয়ে ইউসুফ মুন্সীর মেয়ে পার্শ্ববর্তী পিয়াজখালীর শ্বশুরবাড়ী থেকে কাঁদতে কাঁদতে বাড়ীতে আসে। এসে দেখে তার মা সবার সাথে বসে গল্প করছে। এতে মহসীন কারী হতবাক হয়ে জিজ্ঞেসা করে, আসলে ঘটনা কি ঘটেছে? তখন ইউসুফ মুন্সীর স্ত্রী বললো, আমি তো অজ্ঞান হয়ে পড়েছিলাম। এরপর কি হয়েছে জানি না। শুধু দেখেছি, শাহ্ চন্দ্রপুরী এসে আমাকে ডাক দিলেন, এই তুমি উঠো। এরপর আমার জ্ঞান ফিরে আসে। আমি উঠলাম। মহসীন কারী রাত ১১/১২ টার সময় দরবার শরীফে ফিরে এসে এই মৃত মহিলা পুনরায় জীবিত হয়ে উঠার কথা জানালেন। এরকম বহু ঘটনা আমি দেখেছি।
তিনি বলেন, আশেকে রাসূলেরা! অলী-আল্লাহদের কারামত সত্য। তাঁদের কারামত বিশ্বাস করতে হয়। আগেতো আমিও বিশ্বাস করতাম না। কিন্তু চোখের সামনে ঘটলে বিশ্বাস না করে পারা যায় না। কয়েকদিন আগে আমাদের একজন জাকেরের মেয়েকে চিকিৎসার জন্য ইন্ডিয়া নিয়ে যায়। সেখানকার ডাক্তাররা বলে, তার আর বেশী সময় নেই। আপনারা তাড়াতাড়ি বাংলাদেশে নিয়ে যান। ডাক্তারের কথা শুনে মেয়ের করে মা-বাবা কান্নাকাটি বিমানে ঢাকায় এসে সরাসরি আমার দরবার শরীফে এসে পৌঁছায়। মেয়ের বাবা আমার কাছে এসে চিৎকার করে কাঁদতে লাগলো। আমি জানতে চাই, কি হয়েছে? তখন বললো, তার ব্লাড ক্যান্সার। ইন্ডিয়ার ডাক্তাররা বলেছে, তার আর বেশী সময় নেই। আমরা তখন তাকে নিয়ে চলে এসেছি। আমি মেয়েটাকে জিজ্ঞেস করলাম, তোমার কি হয়েছে? সে বলে, আমার ক্যান্সার। তারপর বললো, আমি এক সাপ্তাহ যাবৎ কিছুই খেতে পারি না- এমনকি পানিও না। আমি জানতে চাই, তোমার কি ক্ষুধা লাগে? সে বলে, ক্ষুধাতো লাগে, কিন্তু আমি খেতে পারি না। আমি তার বাবাকে বললাম, আত্মার বাণী পত্রিকা চুবানো পানি ওকে খাওয়ান। পানি খাওয়ার পর সে খাবার খেতে চায়। আমি তাকে তিন তলায় আমাদের বাসার ভিতরে পাঠাই। সেখানে মেয়েটি পেটভরে খাবার খেলো। এরপর সে একদম সুস্থ্য, কোন অসুখ নেই। এরপর খুশিতে বাড়ী চলে যায়। আল্লাহ্র রহমতে মেয়েটি সুস্থ হয়ে গেছে। আমি মেয়েটির নতুন নাম রেখে দিলাম- নূরজাহান। সুতরাং আল্লাহ্ চাইলে কি না হয়। আপনারা বিশ্বাস রাখেন, বিশ্বাসের নাম ঈমান। নিয়মিত দরবার শরীফে আসবেন। তরকিার আমল করবেন। এতেই আল্লাহর সাহায্য পাবেন।
সকাল ১০টায় অনুষ্ঠান শুরু হলে- প্রথমে আশেকে রাসূলদের মোহাম্মদী ইসলামের ওয়াজিফার তালিম দেওয়া হয়। দুপুর সোয়া ১২টায় জু’মার নামাজের আজানের পর মোহাম্মদী ইসলামের মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। অতঃপর বেলা দেড়টায় জু’মার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। এরপর সূফী সম্রাট হুজুর কেবলা মঞ্চে তশরীফ নিয়ে মাহফিলে সমবেত হাজার হাজার আশেকে রাসূলদের উদ্দেশ্যে তিনি বাণী মোবারক প্রদান করে মাহফিলের আখেরী মুনাজাত পরিচালনা করেন। এরপর তিনি নবাগতদের সবক দেন। মাহফিল শেষে সবাই তাবারুক খেয়ে বিদায় নেন।

Saturday, March 2, 2019

বাবে রহমতের সাপ্তাহিক মাহফিলে সূফী সম্রাট


সূফী সাধনার মাধ্যমে মানুষ নিজের রিপুকে দমন করতে পারে


মহান সংস্কারক মোহাম্মদী ইসলামের পুনর্জীবনদানকারী সূফী সম্রাট হযরত সৈয়দ মাহবুব-এ-খোদা দেওয়ানবাগী (মাঃ আঃ) হুজুর কেবলা বলেন, সূফী সাধনার মাধ্যমে মানুষ নিজের রিপুকে দমন করতে পারে। এই রিপু দমনের একমাত্র ঔষধ হলো ফায়েজ। সেই ফায়েজটা আল্লাহর কাছ থেকে হযরত রাসূল (সঃ) হয়ে আসে। সেই ফায়েজটা মানুষকে পবিত্র করে দেয়, রিপুগুলোকে ঘুম পাড়িয়ে দেয়। ঐ ফায়েজের মাধ্যমে আত্মশুদ্ধি লাভ করতে হয়। যে যতবেশী ফায়েজ অর্জন করতে পারবে, সে ততবেশী উপকৃত হবে। তিনি গত ২রা মার্চ শুক্রবার রাজধানী ঢাকার মতিঝিলের আরামবাগস্থ বাবে রহমত দেওয়ানবাগ শরীফে অনুষ্ঠিত সাপ্তাহিক আশেকে রাসূল (সঃ) মাহফিলে সমবেত হাজার হাজার আশেকে রাসূলের উদ্দেশ্যে বাণী মোবারক প্রদান করছিলেন।
সূফী সম্রাট হুজুর কেবলা বলেন, আদম সন্তানের দিলে শয়তান বাস করে। শয়তানের বাসস্থান মানুষের দিল। হযরত রাসূল (সঃ) ফরমান, যখন সেই দিলে আল্লাহর জ্বিকির জারি হয়, তখন শয়তান তীরের মত ভেগে যায়। এই কারণে আমাদের তরীকায় ক্বালবে জ্বিকির আমরা শিক্ষা দেই। আগে আমরা জানতাম না। আমার মোর্শেদের কাছে জানতে পেরেছি- আত্মশুদ্ধি, দিলজিন্দা, নামাজে হুজুরী। তাফসীর লিখতে গিয়ে পবিত্র কুরআনে পেয়েছি, আল্লাহ্ হযরত মুসা (আঃ)-এর কাছে ওহী নাজিল করে বলেছিলেন, আপনার অনুসারীদেরকে তিনটা বিষয় শিক্ষা দেন- আত্মশুদ্ধি, দিলজিন্দা, নামাজে হুজুরী। হযরত ইব্রাহীম (আঃ)-এর কাছে আল্লাহ্ ওহী নাজিল করে বলেছেন, আপনার অনুসারীদেরকে আত্মশুদ্ধি, দিলজিন্দা, নামাজে হুজুরী শিক্ষা দেন। আমরা এইটা পেয়েছি, আমার মুর্শেদ পীরানে পীর, দস্তগীর, সুলতানুল মাশায়েখ, সুলতানিয়া মোজাদ্দেদীয়া তরীকার ইমাম সৈয়দ আবুল ফজল সুলতান আহমদ (রহঃ)-এর কাছে। এই শিক্ষাটাই আমার মুর্শেদ আমাকে দিয়েছেন। এই শিক্ষাটা সাধনা করতে গেলে মানুষের মধ্যে আল্লাহর প্রেম, রাসূলের প্রেম জাগ্রত হয়। আমরা এটার সাথে সংযোগ করেছি আশেকে রাসূল হওয়া। কারণ রাসূলের যুগ পর্যায়ক্রমে অনেক দূরে, চলে গেছে। এখন হযরত রাসূল (সঃ)-এর শিক্ষা সমাজে নাই। মানুষ রাসূলের কথা বলেই মানুষকে বিপথগামী করে। আমরা ঈমানী পরীক্ষায় পাশ করার জন্য আমরা হযরত রাসূল (সঃ)-এর এই শিক্ষাটায় মিলাদ সংযোগ করেছি। কারণ মিলাদটা পড়লে রাসূলের মহব্বতে কান্না আসে। এই মিলাদটা পড়লে আশেকে রাসূল হওয়াটা সহজ। এছাড়াও আমরা নিয়মিত দরূদ পড়ি।
তিনি বলেন, আমি যখন দেওয়ানবাগ শরীফের বাবে জান্নাতে ছিলাম, তখন ঐখানে এক ঈদে মিলাদুন্নবী (সঃ)-এর সম্মেলনে অসংখ্য লোক হয়েছিল। আমি জিজ্ঞাসা করেছিলাম, আপনারা কারা কারা আমার এখানে এসে রাসূল (সঃ)-কে দেখেছেন? অসংখ্য লোক হাত তুলেছিল। এরপরে আমি বললাম, এতলোক যেহেতু হযরত রাসূল (সঃ)-কে স্বপ্নে দেখেছে, সেহেতু আমরা এখন থেকে সূফী সম্মেলন না করে, আমরা করবো আশেকে রাসূল (সঃ) সম্মেলন। এরপর থেকেই আমরা আশেকে রাসূল (সঃ) সম্মেলন শুরু করি। তখন আমি প্রকাশ্যে ঘোষণা দিয়েছিলাম, আপনারা প্রত্যেকেই নিজ নিজ বাড়ীতে মিলাদ দেন। যারা মিলাদ দিবেন, তারা রাসূলের দিদার পাবেন। রাব্বুল আলামীন দয়া করেছেন, যারা মিলাদ দিয়েছে তাদের রাহমাতাল্লিল আলামীন দয়া করে দিদার দিয়েছেন। বহু লোক রাসূলের দিদার পেয়েছে। এখনও অনেকে আমার কাছে এসে বলে, মিলাদ দিয়ে হযরত রাসূল (সঃ)-এর দিদার পেয়েছে। আপনারা যারা উপস্থিত আছেন, আপনারা কি রাসূল (সঃ)-কে দেখেন না। আপনারা যদি দেখে থাকেন, তবে আপনাদের এদেখা প্রমাণ করে- আপনি রাসূলের উম্মত। না দেখে, না চিনে কিভাবে নিজেকে উম্মত প্রমাণ করবেন।
সূফী সম্রাট হুজুর কেবলা বলেন, যে যাহা ধারন করে তাই তার ধর্ম। আপনার চরিত্রটা কি? শান্তির না অশান্তির। যদি আপনার ধর্ম শান্তির হয়, তবে আপনি মুসলমান। আর অশান্তির হয় তবে আপনি মুসলমান না। এই শিক্ষাটাই অলী-আল্লাহদের দরবারে শিখানো হয়। এই শিক্ষা যেখানে পাবেন, সেখানে আপনার যেতে বাধাঁ নেই। আমাদের দরকার আল্লাহকে পাওয়া, রাসূলকে পাওয়া, চরিত্র সুন্দর করা। আপনি যদি তা করতে পারেন, তবে ঈমানের পরীক্ষায় পাশ করতে পারবেন। আল্লাহ্ কুরআনে বলেন, মু’মেনদের সাথে আল্লাহ্ সকাল সন্ধ্যা দুইবার দিদার দিবেন। আর কাফেরদের সামনে একটা পর্দা করে দিবেন, তারা যেন আল্লাহকে দেখতে না পারে। কাফের আর মুমিনদের মধ্যে পার্থক্য- এক মজলিসে কাফেরদের সামনে পর্দা, আর মুমিনদের সামনে এসে আল্লাহ্ দাঁড়াবেন। মুমেনরা প্রাণভরে আল্লাহকে দেখবেন। আমাদের আল্লাহকে পেতে হবে, রাসূলকে পেতে হবে, চরিত্র সুন্দর করতেই হবে। এই তিনটা না হলে আমরা মুক্তি পাব না। এটা আমাদের মনে রাখতে হবে। এটা গল্পের বিষয় না, সাধনার বিষয়। সাধনা করে যারা আল্লাহকে পেয়েছে, তারা পরম শান্তিতে আছে। আর যারা আল্লাহকে হারিয়েছে তারা চরম অশান্তিতে আছে।
তিনি বলেন, আশেকে রাসূলেরা! মনোযোগ দিয়ে তরীকার কাজ করেন। আমাদের এখানে কুরআন হাদীসের বাইরে কোন কাজ আমরা করি না। আর কেউ তা করুন, সেটাও আমরা পছন্দ করি না। আমরা চাই আমারা যেন রাসূলের দিদার পাই, রাসূলের চরিত্রে চরিত্রবান হতে পারি এবং আল্লাহর দিদার পাই। আপনারা অধিক মোরাকাবা করবেন। হযরত রাসূল (সঃ) পনের বছর মোরাকাবা করার পরেই আল্লাহর সাথে তাঁর যোগাযোগ হয়েছে। আমরা ঐ পনের বছরের মোরাকাবাটা আমাদের সারা জীবনের সাথে মিলিয়ে যদি পাচঁ ওয়াক্ত নামাজে মোরাকাবা করি, আর শেষ রাতে মোরাকাবা করি। এভাবে প্রতিদিন ছয়বার মোরাকাবার মাধ্যমে যদি রাসূলের কাছে যান, গিয়ে কান্নাকাটি করেন। রাসূলের জুতা মোবারক ভিক্ষা নিয়ে আল্লাহর আরশে হাজির হন, কান্নাকটি করেন, আল্লাহর কাছ থেকে ফায়েজ নিয়ে রাসূলের মাধ্যমে আপনার ক্বালবে নিয়ে আসেন, তাহলে আপনার রাসূলের সাথে পরিচয় হবে, আল্লাহর সাথেও পরিচয় হবে। আল্লাহ্ ও রাসূলের সাথে পরিচয় হলে আপনি স্বাধীন, আপনি মুক্ত। আপনার জন্যই আল্লাহর সৃষ্টি জগৎ। সুতরাং মহব্বতের সাথে তরীকার আমল করেন।
সকাল ১০টায় অনুষ্ঠান শুরু হলে- প্রথমে আশেকে রাসূলদের মোহাম্মদী ইসলামের ওয়াজিফার তালিম দেওয়া হয়। দুপুর সাড়ে ১২টায় জু’মার নামাজের আজানের পর মোহাম্মদী ইসলামের মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। অতঃপর বেলা দেড়টায় জু’মার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। এরপর সূফী সম্রাট হুজুর কেবলা মাহফিলে সমবেত হাজার হাজার আশেকে রাসূলদের উদ্দেশ্যে বাণী মোবারক প্রদান করে মাহফিলের আখেরী মুনাজাত পরিচালনা করেন। এরপর তিনি নবাগতদের সবক দেন। মাহফিল শেষে সবাই তাবারুক খেয়ে বিদায় নেন।

Thursday, February 28, 2019

আজ ২৮শে ফেব্রুয়ারী, শুকরিয়া দিবস

আজ ২৮শে ফেব্রুয়ারী, শুকরিয়া দিবস

আজ ২৮শে ফেব্রুয়ারী আশেকে রাসূলদের জন্য শুকরিয়া আদায়ের দিন। গত বছর এদিনে আমাদের মহান মোর্শেদ মহান সংস্কারক মোহাম্মদী ইসলামের পুনর্জীবনদানকারী সূফী সম্রাট হযরত দেওয়ানবাগী (মাঃ আঃ) দয়াল বাবাজান ইউনাইটেড হাসপাতালে ২৫ দিন চিকিৎসার পর তাঁর শারীরিক অবস্থার উন্নতি হলে ২৮শে ফেব্রুয়ারী তাঁকে বাবে রহমত দেওয়ানবাগ শরীফে ফিরিয়ে আনা হয়। আজকের এই শুভ দিনে মহান আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীনের দরবারে জানাই লাখো শুকরিয়া। আল্লাহ্ তায়ালার কাছে প্রার্থনা জানাই- হে প্রভু! তুমি দয়া করে আমাদের দয়াল বাবাজানের হায়াত মোবারক দারাজ করে দাও। তাঁর শরীর মোবারক পূর্ণ সুস্থ রেখো। সারা দুনিয়ার মানুষ যেন তাঁর পরিচয় পেয়ে মোহাম্মদী ইসলামের শিক্ষা গ্রহণ করে আশেকে রাসূল হতে পারে, সেই তাওফিক ভিক্ষা দাও। আমীন।

ডক্টর সৈয়দ এম. সাঈদুর রহমান আল্-মাহবুবী
মহাসচিব
দেওয়ানবাগ শরীফ

Saturday, February 23, 2019

বাবে রহমতের সাপ্তাহিক মাহফিলে সূফী সম্রাট


হযরত রাসূল (সঃ) মে’রাজে গিয়ে আল্লাহকে দেখেছিলেন

মহান সংস্কারক মোহাম্মদী ইসলামের পুনর্জীবনদানকারী সূফী সম্রাট হযরত সৈয়দ মাহ্বুব-এ-খোদা দেওয়ানবাগী (মাঃ আঃ) হুজুর কেবলা বলেন, আল্লাহ্ নিরাকার নন : তাঁর আকার আছে। হযরত রাসূল (সঃ) মে’রাজে গিয়ে আল্লাহকে দেখেছিলেন, তাঁর সাথে কথা বলেছিলেন। হযরত রাসূল (সঃ) কি নিরাকার আল্লাহর সাথে কথা বলেছিলেন? নিরাকার আল্লাহকে কি দেখেছিলেন? নিশ্চয়ই না। তিনি গত ২৩শে ফেব্রুয়ারী শুক্রবার রাজধানী ঢাকার মতিঝিলের আরামবাগস্থ বাবে রহমত দেওয়ানবাগ শরীফে অনুষ্ঠিত সাপ্তাহিক আশেকে রাসূল (সঃ) মাহফিলে সমবেত হাজার হাজার আশেকে রাসূলের উদ্দেশ্যে বাণী মোবারক প্রদান করছিলেন।
সূফী সম্রাট হুজুর কেবলা বলেন, আমরা মাদ্রাসায় যখন পড়তাম, তখন আমাদের শিক্ষকরা পড়াতেন- হযরত জিব্রাঈল (আঃ) হযরত রাসূল (সঃ)-এর কাছে ওহী নিয়ে এসেছিলেন। এর দলিল বুখারী শরীফের কিতাবুল ঈমানের প্রথম হাদীস। কিন্তু এখন আমরা বলছি, আসলে জিব্রাঈল ফেরেশতা রাসূল (সঃ)-কে শিক্ষা দিতে আসেন নাই। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ্ বলেছেন, “আর রাহমানু আল্লামাল কুরআন” অর্থাৎ- দয়াময় আল্লাহ্ (রাসূল কে) কুরআন শিক্ষা দিয়েছেন। আল্লাহ্ বলেন তিনি নিজে রাসূল (সঃ)-কে কুরআন শিক্ষা দিয়েছেন। অথচ সমাজে প্রচলিত আছে, জিব্রাঈল না-কি শিক্ষা দিয়েছেন। এতেই বুঝা যায়- সমাজের প্রচলিত ধারণা ভুল। আল্লাহ্ নিজেই তাঁর হাবীবকে কুরআন শিক্ষা দিয়েছেন। এদিকে হযরত রাসূল (সঃ) বলেছেন, “বুয়িস্তু মুয়াল্লেমাল” অর্থ- “আমি শিক্ষক রূপে প্রেরিত হয়েছি।” আল্লাহ্ যাঁকে সুশিক্ষিত করে শিক্ষক রূপে প্রেরণ করেছেন। তিনি কেন জিব্রাঈলের কাছে থেকে শিক্ষা গ্রহণ করবেন?
তিনি বলেন, আমরা পবিত্র কুরআনের তাফসীর লিখতে গিয়ে দেখেছি, হাদীসের মধ্যে অসংখ্য জাল হাদীস। তখন আমি কি করবো ভেবে বিব্রতকর অবস্থায় পড়ে গেলাম। এরপর আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীনের দয়ায় সমাধান হয়েছে। আমাকে জানিয়ে দেয়া হলো কুরআনের সাথে যে হাদীসের মিল আছে সেটা গ্রহণ করতে, আর যে হাদীস কুরআনের সাথে মিলে না, সেটা পরিত্যাগ করতে। এরপরে, আমি তাফসীরে যে হাদীসের সাথে কুরআন মিলেছে, সেগুলো গ্রহণ করেছি, আর যে হাদীস কুরআনের সাথে মিলে না, সেটা গ্রহণ করিনি। দেখতে গেলে, বাজারে হাদীসের কিতাব সয়লাব হয়ে গেছে। এর মধ্যে কোনটা রাসূলের হাদীস বুঝা কঠিন। এমতাবস্থায় আমরা কিভাবে হাদীসের উপর আমল করবো? কোরআনের তাফসীরের উপর আমল করবো? তাফসীরের মাঝেও অনেক জাল হাদীস ঢুকে গেছে। হযরত রাসূল (সঃ) পরে ইসলামের চরম শত্রু উমাইয়াইতো ক্ষমতায় এসেছে। উমাইয়াদের ৮৯ বছরের শাসনামলে এরা ক্ষমতায় এসে নিজেদের মত ইসলামের নামে চালিয়ে দিয়েছে। আর মোহাম্মদী ইসলামটা থেকে মোহাম্মদ নামটা কেটে দিয়ে দ্বীন ইসলাম লাগিয়ে দিয়েছে। এখন সারাবিশ্বের মানুষ বলে ইসলামের নাম দ্বীন ইসলাম। প্রশ্ন জাগে হযরত রাসূল (সঃ)-এর নাম কোথায় গেল? এতে বুঝা যায় দ্বীন ইসলামে রাসূল (সঃ) নেই। এটা সোয়াবের ইসলাম। সুতরাং আমাদের জানতে হবে আমরা কিভাবে চলবো। একারণেই তরীকার সাধনা করে আপনি যদি অন্তরদৃষ্টি জাগ্রত করতে পারেন, অন্তরের কান জাগ্রত করতে পারেন, অন্তরের মুখ জাগ্রত করতে পারেন, তখন ফায়েজের মাধ্যমে বুঝতে পারবেন, কোনটা সহিহ হাদীস, আর কোনটা জাল হাদীস।
সূফী সম্রাট হুজুর কেবলা বলেন, সারা দুনিয়ার মানুষ মানে আল্লাহ্ নিরাকার। এই জানাটা কি সত্যি? না। বিধর্মীরা হযরত রাসূল (সঃ)-এর ইসলাম ধ্বংস করার জন্য সক্রিয় ছিল। অথচ হযরত রাসূল (সঃ) সব সময় চেষ্টা করেছেন মানুষ যেন আাল্লাহকে পায়। কিন্তু প্রতিপক্ষ ছলে-বলে-কৌশলে হযরত রাসূল (সঃ)-এর ইসলাম থেকে মানুষকে সরিয়ে দিয়েছে। ফলে বিশ্বে এতো মুসলমান হওয়ার পরও ঐক্যমত নেই। দ্বন্দ্ব,কলহ, মারামারি-কাটাকাটি মুসলমানদের ভিতরেই। আল্লাহর রাসূল (সঃ) বলেছেন, অন্যান্য নবীর উম্মতের মধ্যে বাহাত্তর ফেরকা বা দল; আর আমার উম্মতের মধ্যে তিয়াত্তর ফেরকা বা দল। এদের মধ্যে এক দল বেহেস্তী, আর বাহাত্তর দল জাহান্নামী। আবার এটাও বলেছেন, বাহাত্তর দল জাহান্নামী হলেও তিয়াত্তর দলে মধ্যে প্রত্যেক দলেই আলেম থাকবে। তাহলে আমরা কোন দলে যাবো। সব দলইতো নামাজ পড়ে, রোজা রাখে, হজ্ব করে, যাকাত দেয়।
তিনি বলেন, আমাদের চলতে হবে আল্লাহ্ ও আল্লাহ্র রাসূলের বিধান মোতাবেক। আল্লাহ্ ও আল্লাহর রাসূলের বিধান মেনে চলে অলী আল্লাহ্রা। নতুবা কেউ অলী-আল্লাহ্ হতে পারে না। অলী-আল্লাহ্ হতে হলে তাঁকে হযরত রাসূল (সঃ)-এর উত্তরসূরী হতে হবে। আল্লাহর মনোনীত হতে হবে। কামালিয়াতের সার্টিফিকেটটা দেন আল্লাহ্ পাক নিজে। মোর্শেদ তাকে শিক্ষা দেন; আর হযরত রাসূল (সঃ) এবং আল্লাহ্ তাকে পুরুস্কৃত করেন। সুতরাং মনোযোগ দিয়ে তরীকার কাজ করেন এবং আল্লাহ্ সম্বন্ধে জানেন।
সকাল ১০টায় অনুষ্ঠান শুরু হলে- প্রথমে আশেকে রাসূলদের মোহাম্মদী ইসলামের ওয়াজিফার তালিম দেওয়া হয়। দুপুর সোয়া ১২টায় জু’মার নামাজের আজানের পর মোহাম্মদী ইসলামের মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। অতঃপর বেলা দেড় টায় জু’মার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। এরপর সূফী সম্রাট হুজুর কেবলা মাহফিলে সমবেত হাজার হাজার আশেকে রাসূলদের উদ্দেশ্যে বাণী মোবারক প্রদান করে মাহফিলের আখেরী মুনাজাত পরিচালনা করেন। এরপর তিনি নবাগতদের মোহাম্মদী ইসলামের সবক দেন। মাহফিল শেষে সবাই তাবারুক খেয়ে বিদায় নেন।