আল্লাহ্ তায়ালা আমাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচারকারীদের মিথ্যাবাদী প্রমাণ করেছেন
মহান সংস্কারক মোহাম্মদী ইসলামের পুনর্জীবনদানকারী সূফী সম্রাট হযরত সৈয়দ মাহবুব-এ-খোদা দেওয়ানবাগী (মাঃ আঃ) হুজুর কেবলা বলেন, বিশ্ব আশেকে রাসূল (সঃ) সম্মেলন সাফল্যজনকভাবে অনুষ্ঠিত হওয়ার মাধ্যমে আল্লাহ্ তায়ালা আমাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচারকারীদের মিথ্যাবাদী প্রমাণ করেছেন। আমরা যে সত্য ধর্ম প্রচার করি, তা মানুষ বুঝতে পেরেছে। তিনি গত ৯ই ফেব্রুয়ারী শুক্রবার রাজধানী ঢাকার মতিঝিলের আরামবাগস্থ বাবে রহমত দেওয়ানবাগ শরীফে অনুষ্ঠিত সাপ্তাহিক আশেকে রাসূল (সঃ) মাহফিলে সমবেত হাজার হাজার আশেকে রাসূলের উদ্দেশ্যে বাণী মোবারক প্রদান করছিলেন।
সূফী সম্রাট হুজুর কেবলা বলেন, আল্লাহ্ পাকের অপার দয়ার বদৌলতে আমরা পীরানে পীর, দস্তগীর, সুলতানুল মাশায়েখ, সুলতানিয়া-মোজাদ্দেদীয়া তরীকার ইমাম সৈয়দ আবুল ফজল সুলতান আহমদ চন্দ্রপুরী (রহঃ)-এর ১০৮তম শুভ জন্মবার্ষিকী স্মরণে গত শুক্রবার বিশ্ব আশেকে রাসূল (সঃ) সম্মেল উদযাপন করেছি। এবারের সম্মেলনটা ছিল একটি ব্যতিক্রমধর্মী সম্মেলন। আমরা সম্মেলন যেন করতে না পারি, সেজন্য অনেক ষড়যন্ত্র হয়েছে। কিন্তু রাব্বুল আলামীনের অপার দয়ার বরকতে আমরা সুন্দরভাবে সম্মেলন করতে পেরেছি। এটা আল্লাহর বিশেষ দয়া।
তিনি বলেন, নবীদের যুগ, রাসূলের যুগ, আওলিয়ায়ে কেরামের যুগ অতিবাহিত হয়েছে। তাঁরা আল্লাহর একত্ববাদের প্রমাণ মানবজাতির কাছে তুলে ধরেছেন। তাঁরা বলেছেন, আল্লাহ্ এক। এক আল্লাহর পরিচয় তুলে ধরার কারনে, মানুষকে আল্লাহর পথে আহ্বান করার কারনে, তাঁদের কেহ কেহ শহীদ পর্যন্ত হয়েছেন। আল্লাহ্ পাকের অপার দয়ায় আমরা একেবারে সহজে আল্লাহর পরিচয় তুলে ধরতে সক্ষম হয়েছি। মানুষ বলে, আল্লাহ্ নিরাকার। আমরাও বলতাম, আল্লাহ্ নিরাকার। সাধনা জগতে গিয়ে জানলাম আল্লাহর পরিচয় লাভ করা যায়। নিরাকারের তো আর পরিচয় পাওয়া যায় না। আমি আল্লাহর পরিচয় তুলে ধরে প্রথমে ‘আল্লাহ্ কোন পথে’ নামক একটা কিতাব লিখেছি। পরে ‘আল্লাহকে সত্যিই কি দেখা যায় না?’ নামে আরেকটি কিতাব লিখেছি। তখন আমার বিরুদ্ধে আদালতে মামলা হয়েছে। আমি, আমার স্ত্রী, আমার বড় মেয়ে, সাঈদুর মিয়াসহ যারা আমাদের কিতাবের সাথে জড়িত সবার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। মোট সতের জন আসামী ছিল। আমি তখন আমার কিতাবের স্বপক্ষে আল্লাহকে দেখা যায়, এই মর্মে একটা স্টেটমেন্ট লিখে উকিলের মাধ্যমে আদালতে পাঠাই। সেটার নাম ছিল ‘সূফী সম্রাটের জবানবন্দী’। জজ সাহেব আমার জবানবন্দী পড়ে মুগ্ধ হয়ে আমার দরবার শরীফে এসে তরীকা গ্রহণ করেন। এরপর মামলার অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে খারিজ করে দেন।
সূফী সম্রাট হুজুর কেবলা বলেন, আমি আল্লাহর পরিচয় বিস্তারিতভাবে প্রকাশ করার জন্য ‘তাফসীরে সূফী সম্রাট দেওয়ানবাগী’ লিখেছি। এতে পবিত্র কুরআনের বাণী ও হযরত রাসূল (সঃ)-এর বাণী দিয়ে আল্লাহর পরিচয় জগতবাসীর কাছে তুলে ধরেছি। আল্লাহর দয়ায় সম্মেলনের আগের সোমবার আমি এই তাফসীরের নবম খণ্ড লেখা সম্পন্ন করেছি।
তিনি বলেন, এই তাফসীরের ৬ খণ্ড ইতিমধ্যেই প্রকাশিত হয়েছে। অবশিষ্ট সপ্তম অষ্টম ও নবম এই তিন খণ্ড ছাপানোর প্রক্রিয়া চলছে। এই তাফসীর পাঠ করে বুঝবেন, যারা আল্লাহকে নিরাকার বলছে, তাদের কত বড় ভুল। আল্লাহ্ বলেন, আমার আকার আছে। আর আপনি বলবেন, আল্লাহর আকার নেই। তবে তো আপনি সরাসরি আল্লাহ্র বিপক্ষে চলে গেলেন। আপনারা এই তাফসীর পড়ে বুঝতে পারবেন। আল্লাহ্ নিজের পরিচয় তুলে ধরেছেন। আল্লাহ্ বলেন, আমি সমস্ত জ্বীন ও ইনসানকে সৃষ্টি করেছি, তাদের রিজিকের ব্যবস্থা করেছি; আমি আসমান জমিনের সমস্ত প্রাণীকে সৃষ্টি করেছি, এদের রিজিকের ব্যবস্থা করেছি। তারপরও মানুষ বলে আল্লাহ্ নিরাকার। এটা কি আল্লাহর জন্য কষ্টের নয়। নিরাকার মানে কিছুই না। আসলে নিরাকার বলতে কিছু নেই। তবে একটা জিনিস আছে, তা হলো ‘ঘোড়ার ডিম।’ কথাটা সমাজে বহুল প্রচলিত। কারণ ঘোড়া জিন্দেগীতে ডিমও পাড়বে না; আর এই ডিমের আকারও হবে না। বিধর্মীদের ষড়যন্ত্র আর স্বধর্মীদের অজ্ঞতার সুযোগে আল্লাহকে নিরাকার বলে প্রচার করা হয়েছে। আল্লাহকে নিরাকার বলার কারনেই মুসলিম জাতির উপর খোদায়ী গজব আসছে। অন্য কোন জাতির উপর এরকম গজব নেই। সারা বিশ্বে মুসলমানরা ইবাদত বন্দেগীও বেশী করে, গজবেও বেশী পড়ে। আপনি যার ইবাদত করেন, আপনি যদি তাকে নিরাকার বলেন, তিনি কি খুশী হবেন? আল্লাহ্ নিজের পরিচয় প্রচারের জন্য এক লক্ষ চব্বিশ হাজার নবী-রাসূল পাঠিয়েছেন, তাঁরা সবাই স্বজাতির কাছে আল্লাহর পরিচয় তুলে ধরেছেন।
সূফী সম্রাট হুজুর কেবলা বলেন, মুসলিম জাতির আরেকটি ভ্রান্ত ধারণা যে, হযরত রাসূল (সঃ) গরীব ছিলেন। অথচ তাঁর দাদা ছিলেন মক্কার শাসনকর্তা। তাঁর পিতা ছিলেন আন্তর্জাতিক ব্যবসায়ী। শৈশবে হযরত রাসূল (সঃ) দাদার তত্ত্বাবধানেই লালিত পালিত হন। তিনি মক্কার সবচেয়ে ধনাঢ্য রমনী হযরত খাদিজা (রাঃ)-কে বিয়ে করেছিলেন। তাঁর দরবারে প্রতিদিন তিন থেকে চারশত লোক খাবার খেতেন। তিনি গরীব হলে প্রতিদিন কি এতলোক খাওয়াতে পারতেন? আমরা যদি কুলকায়েনাতের রহমত হযরত রাসূল (সঃ)-কে গরীব বলি, তবে তিনি আমাদের সাহায্য করবেন কিভাবে?
তিনি বলেন, আমরা আল্লাহ্ ও হযরত রাসূল (সঃ) সম্বন্ধে আমাদের ধারণা ও বিশ্বাস ঠিক রেখে সাধনা করলে তবেই মঞ্জিলে মকসুদে পৌঁছতে পারবো। আপনারা মনোযোগ দিয়ে তরীকার কাজ করেন। তাহলে আল্লাহর সাহায্য পাবেন।
সকাল ১০টায় অনুষ্ঠান শুরু হলে- প্রথমে আশেকে রাসূলদের মোহাম্মদী ইসলামের ওয়াজিফার তালিম দেওয়া হয়। দুপুর সাড়ে ১২টায় জু’মার নামাজের আজানের পর মোহাম্মদী ইসলামের মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। এরপর দেওয়ানবাগ শরীফের সম্মানিত মহাসচিব বিশিষ্ট লেখক, গবেষক ও সম্পাদক ডক্টর সৈয়দ এম. সাঈদুর রহমান আল্-মাহবুবী মোহাম্মদী ইসলামের শিক্ষা ও তাৎপর্যের উপর আলোচনা করেন। অতঃপর বেলা ২টায় জু’মার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। এরপর সূফী সম্রাট হুজুর কেবলা মাহফিলে সমবেত হাজার হাজার আশেকে রাসূলদের উদ্দেশ্যে বাণী মোবারক প্রদান করে মাহফিলের আখেরী মুনাজাত পরিচালনা করেন। এরপর তিনি নবাগতদের সবক দেন। মাহ্ফিল শেষে সবাই তাবারুক খেয়ে বিদায় নেন।
No comments:
Post a Comment