“মায়ের উদরে চার মাস বয়সে মানুষের ভাগ্য লিপিবদ্ধ করা হয়”
বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনা ও ধর্মীয় ভাবগাম্বির্য্যরে মধ্য দিয়ে গত ১৪ই ডিসেম্বর, শুক্রবার মহান সংস্করক মোহাম্মদী ইসলামের পুনর্জীবনদানকারী সূফী সম্রাট হযরত সৈয়দ মাহবুব-এ-খোদা দেওয়ানবাগী (মাঃ আঃ) হুজুর কেবলার ৬৯তম শুভ জন্মদিন দেশে-বিদেশে নানাবিদ কর্মসূচীর মাধ্যমে উদযাপন করা হয়। এ উপলক্ষে কেন্দ্রীয়ভাবে রাজধানী ঢাকার মতিঝিলের বাবে রহমত দেওয়ানবাগ শরীফে আয়োজন করা হয় এক বিশেষ সংবর্ধনা অনুষ্ঠান। সকাল হতে বাদ জুম্মা পর্যন্ত অনুষ্ঠিত এ সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বাণী মোবারক প্রদানকালে সূফী সম্রাট হযরত দেওয়ানবাগী (মাঃ আঃ) হুজুর কেবলা বলেন, আজ থেকে ঊনসত্তর বছর পূর্বে আমার জন্ম হয়েছে। আল্লাহর রাসূলের পক্ষ থেকে জানা যায়, আমরা যখন চার মাস বয়সে মায়ের উদরে থাকি, তখনই আল্লাহর পক্ষ থেকে একজন ফেরেশতা পাঠানো হয় তার ভাগ্য লিখার জন্য। ফেরেশতা এসে তার ভাগ্য লিপিবদ্ধ করে দেয়। কতদিন সে দুনিয়াতে বেঁচে থাকবে; সে বেশী জ্ঞানী হবে, না কম জ্ঞানী হবে- আল্লাহর পক্ষ থেকে লিখে দেয়া হয়। এই হিসেবে যদি আমরা পিছনের দিকে তাকাই দেখতে পাবো- আমাদের হায়াতে জিন্দেগী হতে ঊনসত্তরটি বছর বিদায় হয়ে গেছে। আর কতদিন রাব্বুল আলামীন আমাদেরকে তাঁর এই জগতে থাকার সুযোগ দিবেন, তিনিই ভাল জানেন।
তিনি বলেন, হযরত রাসূল (সঃ) ফরমান, মৃত্যুর সময় আমাদেরকে তিনটা প্রশ্ন করা হবে- মার রাব্বুকা? ওয়ামা দ্বীনুকা? ওয়ামান নাবীয়্যুকা? অর্থাৎ- তোমার প্রভু কে? তোমার ধর্ম কি? তোমার নবী কে? আপনি যদি প্রশ্নের সঠিক জবাব দিতে পারেন, তবে ঈমান নিয়ে কবরে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে। আর জবাব দিতে না পারলে তো আপনি ফেল। সুতরাং দুনিয়াতে থেকেই আল্লাহকে পেতে হবে এবং আল্লাহর সাথে যোগাযোগ করতে হবে। পৃথিবীতে যত নবী, রাসূল ও অলী-আল্লাহ্ এসেছেন, তাঁরা সবাই সাধনা করে আল্লাহকে পেয়েছেন।
সূফী সম্রাট হুজুর কেবলা বলেন, আমাদের ধর্ম সম্বন্ধে সঠিক ধারণা নেই। আমরা মনে করি- মাদ্রাসায় লেখাপড়া করলে নায়েবে রাসূল হওয়া যায়। নায়েবে রাসূল হতে হলে মাদ্রাসায় পড়তে হয়। আমি মাদ্রাসায় পড়ে দেখেছি, কতটুকু নায়েবে রাসূল হয়েছি। পরে মোর্শেদের দরবারে ১২ বছর গোলামী করে ঈমানদার হতে পেরেছি। সুতরাং নবুয়তের যুগে মানুষ নবী-রাসূলের সাহচর্যে গিয়ে যেমন আল্লাহকে পেয়েছেন, তেমনি এ যুগে নায়েবে রাসূল অলী-আল্লাহদের সাহচর্যে গিয়ে গোলামী করে নিজের ভিতরে দোষ-ক্রুটি দূর করে আল্লাহকে পেতে হবে। আল্লাহকে যদি পান, তবে আপনি মুমেন। হাদীস শরীফে বলা হয়েছে, “আসসালাতু মিরাজুল মু’মিনীন”- নামাজ হলো মুমিনদের মে’রাজ। যিনি মু’মেন, নামাজে তাঁর সাথে আল্লাহর দীদার হয়। তিনি আল্লাহকে দেখে সেজদা করতে পারেন।
তিনি বলেন, আল্লাহকে দেখার কথা বললে- এক শ্রেণীর লোকেরা বলেন, মুসা (আঃ) নবী হয়েও তো আল্লাহকে দেখে নাই। যদি তাকে প্রশ্ন করেন, আপনি কি মুসা (আঃ)-এর উম্মত? সকল নবীরাই আল্লাহকে দেখেছেন। আমরা তো এখন আল্লাহকে দেখতেও চাই না। আল্লাহকে দেখলে যদি ঈমান চলে যায়, তবে কাকে দেখলে ঈমানদার হবে? শয়তানকে দেখলে কি মানুষ ঈমানদার হয়? সুতরাং সাধনা করে আপনার মালিক আল্লাহকে চিনেন। আল্লাহকে না চিনলে প্রতিনিধিত্ব করা যায় না। আমরা আগে জানতাম, আল্লাহ্ নিরাকার। কিন্তু সাধনার জীবনে এসে রাব্বুল আলামীনের অশেষ দয়ায় যখন রাব্বুল আলামীনের দেখার খোশ নছিব হয়েছে, কথা বলার সুযোগ হয়েছে, তখন বুঝতে পেরেছি, আল্লাহ্ নিরাকার নয়। এরপরে চিন্তা করলাম, আল্লাহর এই মহা সত্যটা প্রকাশ করতে হবে। দীর্ঘ সাধনার পর আল্লাহর বাণী এবং হযরত রাসূল (সঃ)-এর বাণী দিয়ে আমি আট খণ্ডে ‘তাফসীরে সূফী সম্রাট দেওয়ানবাগী’ লিখেছি। আপনারা তাফসীর পড়ে দেখেন, আমরা পবিত্র কোরআন ও হাদীসের বাইরে একটা কথাও লিখি নাই। আশ্চর্যের ব্যাপার হলো- আমরা ত্রিশ পাড়া কোরআনকে তন্ন তন্ন করে খুঁজে দেখেছি, আল্লাহ্ নিরাকার এমন একটা আয়াতও পাই নাই। আমরা মস্ত বড় একটা ভুলে ছিলাম। রাব্বুল আলামীনের দয়ায় আমাদের এই ভুলটা সংশোধন হয়েছে। আপনারা তাফসীর পড়ে দেখেন। সবগুলো কোরআনের আয়াত আমরা সাজিয়ে লিখে দিয়েছি। আল্লাহর বাণী, রাসূলের বর্ণনা দিয়ে তাফসীর সমাপ্ত করেছি।
সূফী সম্রাট হুজুর কেবলা বলেন, আল্লাহ্ আমাদের মালিক, রাসূল আমাদের সাফায়েতকারী। অথচ তাঁদের সম্বন্ধে আমাদের সঠিক ধারণা নেই। আমরা মনে করি- আল্লাহ্ নিরাকার, আর রাসূল (সঃ) গরীব ছিলেন। হযরত রাসূল (সঃ)-এর দাদা ছিলেন মক্কার শাসনকর্তা, আর হযরত রাসূল (সঃ) ছিলেন মদীনার শাসনকর্তা। মদীনার শাসন কর্তা কি সত্তর তালি জামা পড়ে সিংহাসনে বসতেন? এসব উল্টা-পাল্টা ধারনা সৃষ্টি হয়েছে হযরত রাসূল (সঃ) সম্বন্ধে সঠিক জ্ঞান না থাকার কারনে। সুতরাং আমাদের সবার আল্লাহ্ ও হযরত রাসূল (সঃ) সম্বন্ধে সঠিক ধারণা থাকা উচিৎ। আপনারা মনোযোগ দিয়ে সাধনা করেন যেন আল্লাহ্ ও হযরত রাসূল (সঃ)-কে পেতে পারেন।
সকাল ৮টায় পবিত্র কুরআন তেলাওয়াত ও মিলাদ মাহফিলের মাধ্যমে অনুষ্ঠান শুরু হয়। অতঃপর স্বাগত ভাষন দেন দেওয়ানবাগ শরীফের মহাসচিব ডক্টর সৈয়দ এম. সাঈদুর রহমান আল মাহবুবী। এরপর হামদ, নাতে রাসূল ও শানে মোর্শেদ পরিবেশিত হয়। সকাল ১১টায় সূফী সম্রাট হুজুর কেবলা পবিত্র জন্মদিন উপলক্ষে একটি বিশাল বড় কেক কাটেন, ‘সূফী সম্রাট’ নামক স্মরণিকা মোড়ক উন্মোচন করেন এবং দেওয়ানবাগ শরীফের একটি নতুন সোস্যাল মিডিয়া প্লাটফর্ম ‘দোস্তাম’-এর উদ্বোধন করেন। এরপর বাবে রহমত ভবনের ১০ তলার ছাদ থেকে সূফী সম্রাটের পবিত্র জন্মদিনের বেলুন উড়ানো হয়। এরপর দুপুর সোয়া ১২টায় জুম্মার নামাজের আজানের পর জ্যেষ্ঠ সাহেবজাদা ইমাম ড. সৈয়দ এ.এফ.এম. নূর-এ-খোদা, মেজো সাহেবজাদা ইমাম ড. আরসাম কুদরত-এ-খোদা ও ছোট সাহেবজাদা ইমাম ড. সৈয়দ এ.এফ.এম. মঞ্জুর-এ-খোদা বক্তব্য রাখেন। বেলা পৌঁনে দুইটায় আশেকে রাসূল ও মুক্তিকামী মানুষ জুম্মার নামাজ আদায় করেন। এরপর সূফী সম্রাট হুজুর কেবলা মঞ্চে তশরীফ নিলে সমস্ত আশেকে রাসূলদের পক্ষ থেকে তাঁকে পুষ্পমাল্য প্রদান করেন ইমাম ড. সৈয়দ এ.এফ.এম. নূর-এ-খোদা। অতঃপর তিনি বাণী মোবারক দেয়ার পর সবার ইহকালের শান্তি ও পরকালের মুক্তি কামনা করে আখেরী মুনাজাত পরিচালনা করেন। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন- সেজো সাহেবজাদা ইমাম ড. সৈয়দ এ.এফ.এম. ফজল-এ-খোদা, জ্যেষ্ঠ দৌহিত্র ডক্টর সৈয়দ এ.এফ.এম. বরকত-এ-খোদা ও সৈয়দ এ.এফ.এম. রহমত-এ-খোদাসহ দেশের গণ্য মান্য ও নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গ। সম্মেলনে আগত মেহমানদের বিরিয়ানীর প্যাকেট ও কেক দেয়া হয়।