Saturday, December 14, 2019

পবিত্র জন্মবার্ষিকীর সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে সূফী সম্রাট


“মায়ের উদরে চার মাস বয়সে মানুষের ভাগ্য লিপিবদ্ধ করা হয়”

বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনা ও ধর্মীয় ভাবগাম্বির্য্যরে মধ্য দিয়ে গত ১৪ই ডিসেম্বর, শুক্রবার মহান সংস্করক মোহাম্মদী ইসলামের পুনর্জীবনদানকারী সূফী সম্রাট হযরত সৈয়দ মাহবুব-এ-খোদা দেওয়ানবাগী (মাঃ আঃ) হুজুর কেবলার ৬৯তম শুভ জন্মদিন দেশে-বিদেশে নানাবিদ কর্মসূচীর মাধ্যমে উদযাপন করা হয়। এ উপলক্ষে কেন্দ্রীয়ভাবে রাজধানী ঢাকার মতিঝিলের বাবে রহমত দেওয়ানবাগ শরীফে আয়োজন করা হয় এক বিশেষ সংবর্ধনা অনুষ্ঠান। সকাল হতে বাদ জুম্মা পর্যন্ত অনুষ্ঠিত এ সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বাণী মোবারক প্রদানকালে সূফী সম্রাট হযরত দেওয়ানবাগী (মাঃ আঃ) হুজুর কেবলা বলেন, আজ থেকে ঊনসত্তর বছর পূর্বে আমার জন্ম হয়েছে। আল্লাহর রাসূলের পক্ষ থেকে জানা যায়, আমরা যখন চার মাস বয়সে মায়ের উদরে থাকি, তখনই আল্লাহর পক্ষ থেকে একজন ফেরেশতা পাঠানো হয় তার ভাগ্য লিখার জন্য। ফেরেশতা এসে তার ভাগ্য লিপিবদ্ধ করে দেয়। কতদিন সে দুনিয়াতে বেঁচে থাকবে; সে বেশী জ্ঞানী হবে, না কম জ্ঞানী হবে- আল্লাহর পক্ষ থেকে লিখে দেয়া হয়। এই হিসেবে যদি আমরা পিছনের দিকে তাকাই দেখতে পাবো- আমাদের হায়াতে জিন্দেগী হতে ঊনসত্তরটি বছর বিদায় হয়ে গেছে। আর কতদিন রাব্বুল আলামীন আমাদেরকে তাঁর এই জগতে থাকার সুযোগ দিবেন, তিনিই ভাল জানেন।

সূফী সম্রাট হুজুর কেবলা বলেন, সবাই চেষ্টা করেন, যেন আল্লাহতে পূর্ণ ঈমানদার হতে পারেন। মুসলিম বিশ্বে দেখেন, মুসলমানদের মধ্যে ফেতনা অনেক। হযরত রাসূল (সঃ) বলেন, অন্যান্য নবীদের মধ্যে ছিল ৭২ ফেরকা বা দল। আর আমার উম্মতের মধ্যে ৭৩ ফেরকা বা দল। এর মধ্যে ৭২ ফেরকা জাহান্নামী। আর একটা দল বেহেশতী। সুতরাং আমাদের ঠিকানা খুঁজে বের করতে হবে। আমাদের আল্লাহর পরিচয় জানতে হবে, রাসূলের পরিচয় জানতে হবে।
তিনি বলেন, হযরত রাসূল (সঃ) ফরমান, মৃত্যুর সময় আমাদেরকে তিনটা প্রশ্ন করা হবে- মার রাব্বুকা? ওয়ামা দ্বীনুকা? ওয়ামান নাবীয়্যুকা? অর্থাৎ- তোমার প্রভু কে? তোমার ধর্ম কি? তোমার নবী কে? আপনি যদি প্রশ্নের সঠিক জবাব দিতে পারেন, তবে ঈমান নিয়ে কবরে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে। আর জবাব দিতে না পারলে তো আপনি ফেল। সুতরাং দুনিয়াতে থেকেই আল্লাহকে পেতে হবে এবং আল্লাহর সাথে যোগাযোগ করতে হবে। পৃথিবীতে যত নবী, রাসূল ও অলী-আল্লাহ্ এসেছেন, তাঁরা সবাই সাধনা করে আল্লাহকে পেয়েছেন।
সূফী সম্রাট হুজুর কেবলা বলেন, আমাদের ধর্ম সম্বন্ধে সঠিক ধারণা নেই। আমরা মনে করি- মাদ্রাসায় লেখাপড়া করলে নায়েবে রাসূল হওয়া যায়। নায়েবে রাসূল হতে হলে মাদ্রাসায় পড়তে হয়। আমি মাদ্রাসায় পড়ে দেখেছি, কতটুকু নায়েবে রাসূল হয়েছি। পরে মোর্শেদের দরবারে ১২ বছর গোলামী করে ঈমানদার হতে পেরেছি। সুতরাং নবুয়তের যুগে মানুষ নবী-রাসূলের সাহচর্যে গিয়ে যেমন আল্লাহকে পেয়েছেন, তেমনি এ যুগে নায়েবে রাসূল অলী-আল্লাহদের সাহচর্যে গিয়ে গোলামী করে নিজের ভিতরে দোষ-ক্রুটি দূর করে আল্লাহকে পেতে হবে। আল্লাহকে যদি পান, তবে আপনি মুমেন। হাদীস শরীফে বলা হয়েছে, “আসসালাতু মিরাজুল মু’মিনীন”- নামাজ হলো মুমিনদের মে’রাজ। যিনি মু’মেন, নামাজে তাঁর সাথে আল্লাহর দীদার হয়। তিনি আল্লাহকে দেখে সেজদা করতে পারেন।
তিনি বলেন, আল্লাহকে দেখার কথা বললে- এক শ্রেণীর লোকেরা বলেন, মুসা (আঃ) নবী হয়েও তো আল্লাহকে দেখে নাই। যদি তাকে প্রশ্ন করেন, আপনি কি মুসা (আঃ)-এর উম্মত? সকল নবীরাই আল্লাহকে দেখেছেন। আমরা তো এখন আল্লাহকে দেখতেও চাই না। আল্লাহকে দেখলে যদি ঈমান চলে যায়, তবে কাকে দেখলে ঈমানদার হবে? শয়তানকে দেখলে কি মানুষ ঈমানদার হয়? সুতরাং সাধনা করে আপনার মালিক আল্লাহকে চিনেন। আল্লাহকে না চিনলে প্রতিনিধিত্ব করা যায় না। আমরা আগে জানতাম, আল্লাহ্ নিরাকার। কিন্তু সাধনার জীবনে এসে রাব্বুল আলামীনের অশেষ দয়ায় যখন রাব্বুল আলামীনের দেখার খোশ নছিব হয়েছে, কথা বলার সুযোগ হয়েছে, তখন বুঝতে পেরেছি, আল্লাহ্ নিরাকার নয়। এরপরে চিন্তা করলাম, আল্লাহর এই মহা সত্যটা প্রকাশ করতে হবে। দীর্ঘ সাধনার পর আল্লাহর বাণী এবং হযরত রাসূল (সঃ)-এর বাণী দিয়ে আমি আট খণ্ডে ‘তাফসীরে সূফী সম্রাট দেওয়ানবাগী’ লিখেছি। আপনারা তাফসীর পড়ে দেখেন, আমরা পবিত্র কোরআন ও হাদীসের বাইরে একটা কথাও লিখি নাই। আশ্চর্যের ব্যাপার হলো- আমরা ত্রিশ পাড়া কোরআনকে তন্ন তন্ন করে খুঁজে দেখেছি, আল্লাহ্ নিরাকার এমন একটা আয়াতও পাই নাই। আমরা মস্ত বড় একটা ভুলে ছিলাম। রাব্বুল আলামীনের দয়ায় আমাদের এই ভুলটা সংশোধন হয়েছে। আপনারা তাফসীর পড়ে দেখেন। সবগুলো কোরআনের আয়াত আমরা সাজিয়ে লিখে দিয়েছি। আল্লাহর বাণী, রাসূলের বর্ণনা দিয়ে তাফসীর সমাপ্ত করেছি।
সূফী সম্রাট হুজুর কেবলা বলেন, আল্লাহ্ আমাদের মালিক, রাসূল আমাদের সাফায়েতকারী। অথচ তাঁদের সম্বন্ধে আমাদের সঠিক ধারণা নেই। আমরা মনে করি- আল্লাহ্ নিরাকার, আর রাসূল (সঃ) গরীব ছিলেন। হযরত রাসূল (সঃ)-এর দাদা ছিলেন মক্কার শাসনকর্তা, আর হযরত রাসূল (সঃ) ছিলেন মদীনার শাসনকর্তা। মদীনার শাসন কর্তা কি সত্তর তালি জামা পড়ে সিংহাসনে বসতেন? এসব উল্টা-পাল্টা ধারনা সৃষ্টি হয়েছে হযরত রাসূল (সঃ) সম্বন্ধে সঠিক জ্ঞান না থাকার কারনে। সুতরাং আমাদের সবার আল্লাহ্ ও হযরত রাসূল (সঃ) সম্বন্ধে সঠিক ধারণা থাকা উচিৎ। আপনারা মনোযোগ দিয়ে সাধনা করেন যেন আল্লাহ্ ও হযরত রাসূল (সঃ)-কে পেতে পারেন।
সকাল ৮টায় পবিত্র কুরআন তেলাওয়াত ও মিলাদ মাহফিলের মাধ্যমে অনুষ্ঠান শুরু হয়। অতঃপর স্বাগত ভাষন দেন দেওয়ানবাগ শরীফের মহাসচিব ডক্টর সৈয়দ এম. সাঈদুর রহমান আল মাহবুবী। এরপর হামদ, নাতে রাসূল ও শানে মোর্শেদ পরিবেশিত হয়। সকাল ১১টায় সূফী সম্রাট হুজুর কেবলা পবিত্র জন্মদিন উপলক্ষে একটি বিশাল বড় কেক কাটেন, ‘সূফী সম্রাট’ নামক স্মরণিকা মোড়ক উন্মোচন করেন এবং দেওয়ানবাগ শরীফের একটি নতুন সোস্যাল মিডিয়া প্লাটফর্ম ‘দোস্তাম’-এর উদ্বোধন করেন। এরপর বাবে রহমত ভবনের ১০ তলার ছাদ থেকে সূফী সম্রাটের পবিত্র জন্মদিনের বেলুন উড়ানো হয়। এরপর দুপুর সোয়া ১২টায় জুম্মার নামাজের আজানের পর জ্যেষ্ঠ সাহেবজাদা ইমাম ড. সৈয়দ এ.এফ.এম. নূর-এ-খোদা, মেজো সাহেবজাদা ইমাম ড. আরসাম কুদরত-এ-খোদা ও ছোট সাহেবজাদা ইমাম ড. সৈয়দ এ.এফ.এম. মঞ্জুর-এ-খোদা বক্তব্য রাখেন। বেলা পৌঁনে দুইটায় আশেকে রাসূল ও মুক্তিকামী মানুষ জুম্মার নামাজ আদায় করেন। এরপর সূফী সম্রাট হুজুর কেবলা মঞ্চে তশরীফ নিলে সমস্ত আশেকে রাসূলদের পক্ষ থেকে তাঁকে পুষ্পমাল্য প্রদান করেন ইমাম ড. সৈয়দ এ.এফ.এম. নূর-এ-খোদা। অতঃপর তিনি বাণী মোবারক দেয়ার পর সবার ইহকালের শান্তি ও পরকালের মুক্তি কামনা করে আখেরী মুনাজাত পরিচালনা করেন। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন- সেজো সাহেবজাদা ইমাম ড. সৈয়দ এ.এফ.এম. ফজল-এ-খোদা, জ্যেষ্ঠ দৌহিত্র ডক্টর সৈয়দ এ.এফ.এম. বরকত-এ-খোদা ও সৈয়দ এ.এফ.এম. রহমত-এ-খোদাসহ দেশের গণ্য মান্য ও নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গ। সম্মেলনে আগত মেহমানদের বিরিয়ানীর প্যাকেট ও কেক দেয়া হয়।

Saturday, December 7, 2019

বাবে রহমতের সাপ্তাহিক মাহফিলে সূফী সম্রাট


“মহামানবদের জন্মদিন, ওফাতের দিন ও পুনরুত্থানের দিন মানুষের মুক্তির দিন”

মহান সংস্কারক মোহাম্মদী ইসলামের পুনর্জীবনদানকারী সূফী সম্রাট হযরত সৈয়দ মাহবুব-এ-খোদা দেওয়ানবাগী (মাঃ আঃ) হুজুর কেব্লা বলেন, মহামানবদের জন্মদিন, ওফাতের দিন ও পুনরুত্থানের দিন- এই তিনটা দিনে আল্লাহ্ মানুষের মুক্তির ব্যবস্থা করে থাকেন। তিনি গত ৭ই ডিসেম্বর শুক্রবার রাজধানী ঢাকার মতিঝিলের আরামবাগস্থ বাবে রহমত দেওয়ানবাগ শরীফে অনুষ্ঠিত সাপ্তাহিক আশেকে রাসূল (সঃ) মাহ্ফিলে সমবেত হাজার হাজার আশেকে রাসূলের উদ্দেশ্যে বাণী মোবারক দিচ্ছিলেন।
সূফী সম্রাট হুজুর কেবলা বলেন, আল্লাহ্ নবী-রাসূলদের মোজেজা দিয়ে আর অলী-আল্লাহদের কারামত দিয়ে সাহায্য করেন। সমাজের অনেকের ধারণা, যাঁরা অলী-আল্লাহ্, তাঁদের কি আবার অলৌকিকত্ব থাকে? আসলে সেটা আল্লাহর পক্ষ থেকেই ঘটানো হয়। নবুয়তের যুগে যাঁরা নবী-রাসূল হয়ে জগতে এসেছিলেন, আল্লাহ্ তাঁদেরকে অলৌকিক মোজেজা দিয়ে সাহায্য করেছেন। হযরত মুসা (আঃ)-কে আল্লাহ্ নয়টা মোজেজা দিয়েছিলেন। আমাদের রাসূল (সঃ)-এরও অসংখ্য মোজেজা ছিল। সমস্যা হলো- উমাইয়াদের শাসনামলে হযরত রাসূল (সঃ)-এর মোজেজা ধরে রাখার মত লোক তেমন ছিল না।
তিনি বলেন, একদিন আবু জাহেল বলেছিল, ভাতিজা। তুমি যদি এই চাঁদটাকে দ্বিখন্ডিত করতে পার, তাহলে আমি তোমাকে রাসূল স্বীকার করবো এবং ইসলাম গ্রহণ করবো। কারণ আবু জাহেলের ধারণা ছিল, এটাতো কোন মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়। তখন হযরত রাসূল (সঃ) বললেন, ঠিক আছে। তিনি তাঁর শাহাদাত আঙ্গুলী মোবারক দিয়ে ইশারা দিলেন। সাথে সাথে চাঁদ দুই টুকরা হয়ে যায়। উপস্থিত যারা ছিল তারা এঘটনা দেখেছে। আবু জাহেল বলেছিল, মোহাম্মদ! তুমি শেষ পর্যন্ত চাঁদের মাঝে যাদু লাগিয়ে দিলে। এরপরে সে বলে যায়, তার আর ইসলাম গ্রহণ করা হলো না। আসলে যাদের ভাগ্যে হেদায়েত নেই, তাদের এমনই হয়। হযরত রাসূল (সঃ) আরো অসংখ্য অলৌকিক মোজেজা দেখিয়ে ছিলেন। চৌদ্দশত বছর পরে জন্ম নিয়ে আমাদের দেশে এখনো আশেকে রাসূলেরা হযরত রাসূল (ষঃ)-এর মোজেজা দেখতে পায়।
সূফী সম্রাট হুজুর কেবলা বলেন, আমার মোর্শেদের দরবারে আমরা একদিন আসরের নামাজ পড়ে মসজিদ থেকে বের হচ্ছিলাম। এমন সময় হাওলাদার কান্দির ইউছুফ মুন্সী নামে একজন লোক আমার মোর্শেদকে বললেন, বাবাজান! আমার স্ত্রী মারা গেছে। দয়া করে জানাজার নামাজ পড়ার জন্য দরবার থেকে একজন হুজুর পাঠান। বাবাজান আমাকে বললেন, মাহবুব মিয়া! একজন মাওলানা পাঠিয়ে দেন। তাড়াহুড়ার কিছু নেই, মাগরিবের পরে গেলেই চলবে। দরবার শরীফে মহসীন কারী নামে একজন ছিলো। আমি তাকে বললাম, আপনি ঐ গ্রামে গিয়ে তার জানাজার নামাজ পড়িয়ে আসেন। সে জানতে চায়, কখন যেতে হবে? আমি বললাম, এশার নামাজের সময় গেলেই চলবে। মহসীন কারী এশার নামাজের সময় রওয়ানা হলেন- ইউসুফ মুন্সীর বাড়ীর উদ্দেশ্যে। সে ইউসুফ মুন্সীর বাড়ীর কাছে গিয়ে সেখানে মারা যাওয়ার কোন আলামত পায় নাই। একটা মানুষ মারা গেলে সেখানে মানুষ কান্নাকাটি করে। কিন্তু সেই বাড়ীতে এরকম কোন লক্ষন দেখা যায় নাই। মহসীন কারী ভাবলো, আমি কি কোন ভুল সংবাদে এসেছি? তারপরও সে বাড়ীতে প্রবেশ করে দেখে, উঠানের মধ্যে সবাই বসে গল্প করছে। কারী সাহেব যার মৃত্যুর সংবাদে গেলেন, সেই মহিলাও উঠানে বসে অন্যদের সাথে গল্প করছে। এদিকে মায়ের মৃত্যুর সংবাদ পেয়ে ইউসুফ মুন্সীর মেয়ে পার্শ্ববর্তী পিয়াজখালীর শ্বশুরবাড়ী থেকে কাঁদতে কাঁদতে বাড়ীতে আসে। এসে দেখে তার মা সবার সাথে বসে গল্প করছে। এতে মহসীন কারী হতবাক হয়ে জিজ্ঞেসা করে, আসলে ঘটনা কি ঘটেছে? তখন ইউসুফ মুন্সীর স্ত্রী বললো, আমি তো অজ্ঞান হয়ে পড়েছিলাম। এরপর কি হয়েছে জানি না। শুধু দেখেছি, শাহ্ চন্দ্রপুরী এসে আমাকে ডাক দিলেন, এই তুমি উঠো। এরপর আমার জ্ঞান ফিরে আসে। আমি উঠলাম। মহসীন কারী রাত ১১/১২ টার সময় দরবার শরীফে ফিরে এসে এই মৃত মহিলা পুনরায় জীবিত হয়ে উঠার কথা জানালেন। এরকম বহু ঘটনা আমি দেখেছি।
তিনি বলেন, আশেকে রাসূলেরা! অলী-আল্লাহদের কারামত সত্য। তাঁদের কারামত বিশ্বাস করতে হয়। আগেতো আমিও বিশ্বাস করতাম না। কিন্তু চোখের সামনে ঘটলে বিশ্বাস না করে পারা যায় না। কয়েকদিন আগে আমাদের একজন জাকেরের মেয়েকে চিকিৎসার জন্য ইন্ডিয়া নিয়ে যায়। সেখানকার ডাক্তাররা বলে, তার আর বেশী সময় নেই। আপনারা তাড়াতাড়ি বাংলাদেশে নিয়ে যান। ডাক্তারের কথা শুনে মেয়ের করে মা-বাবা কান্নাকাটি বিমানে ঢাকায় এসে সরাসরি আমার দরবার শরীফে এসে পৌঁছায়। মেয়ের বাবা আমার কাছে এসে চিৎকার করে কাঁদতে লাগলো। আমি জানতে চাই, কি হয়েছে? তখন বললো, তার ব্লাড ক্যান্সার। ইন্ডিয়ার ডাক্তাররা বলেছে, তার আর বেশী সময় নেই। আমরা তখন তাকে নিয়ে চলে এসেছি। আমি মেয়েটাকে জিজ্ঞেস করলাম, তোমার কি হয়েছে? সে বলে, আমার ক্যান্সার। তারপর বললো, আমি এক সাপ্তাহ যাবৎ কিছুই খেতে পারি না- এমনকি পানিও না। আমি জানতে চাই, তোমার কি ক্ষুধা লাগে? সে বলে, ক্ষুধাতো লাগে, কিন্তু আমি খেতে পারি না। আমি তার বাবাকে বললাম, আত্মার বাণী পত্রিকা চুবানো পানি ওকে খাওয়ান। পানি খাওয়ার পর সে খাবার খেতে চায়। আমি তাকে তিন তলায় আমাদের বাসার ভিতরে পাঠাই। সেখানে মেয়েটি পেটভরে খাবার খেলো। এরপর সে একদম সুস্থ্য, কোন অসুখ নেই। এরপর খুশিতে বাড়ী চলে যায়। আল্লাহ্র রহমতে মেয়েটি সুস্থ হয়ে গেছে। আমি মেয়েটির নতুন নাম রেখে দিলাম- নূরজাহান। সুতরাং আল্লাহ্ চাইলে কি না হয়। আপনারা বিশ্বাস রাখেন, বিশ্বাসের নাম ঈমান। নিয়মিত দরবার শরীফে আসবেন। তরকিার আমল করবেন। এতেই আল্লাহর সাহায্য পাবেন।
সকাল ১০টায় অনুষ্ঠান শুরু হলে- প্রথমে আশেকে রাসূলদের মোহাম্মদী ইসলামের ওয়াজিফার তালিম দেওয়া হয়। দুপুর সোয়া ১২টায় জু’মার নামাজের আজানের পর মোহাম্মদী ইসলামের মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। অতঃপর বেলা দেড়টায় জু’মার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। এরপর সূফী সম্রাট হুজুর কেবলা মঞ্চে তশরীফ নিয়ে মাহফিলে সমবেত হাজার হাজার আশেকে রাসূলদের উদ্দেশ্যে তিনি বাণী মোবারক প্রদান করে মাহফিলের আখেরী মুনাজাত পরিচালনা করেন। এরপর তিনি নবাগতদের সবক দেন। মাহফিল শেষে সবাই তাবারুক খেয়ে বিদায় নেন।

Saturday, March 2, 2019

বাবে রহমতের সাপ্তাহিক মাহফিলে সূফী সম্রাট


সূফী সাধনার মাধ্যমে মানুষ নিজের রিপুকে দমন করতে পারে


মহান সংস্কারক মোহাম্মদী ইসলামের পুনর্জীবনদানকারী সূফী সম্রাট হযরত সৈয়দ মাহবুব-এ-খোদা দেওয়ানবাগী (মাঃ আঃ) হুজুর কেবলা বলেন, সূফী সাধনার মাধ্যমে মানুষ নিজের রিপুকে দমন করতে পারে। এই রিপু দমনের একমাত্র ঔষধ হলো ফায়েজ। সেই ফায়েজটা আল্লাহর কাছ থেকে হযরত রাসূল (সঃ) হয়ে আসে। সেই ফায়েজটা মানুষকে পবিত্র করে দেয়, রিপুগুলোকে ঘুম পাড়িয়ে দেয়। ঐ ফায়েজের মাধ্যমে আত্মশুদ্ধি লাভ করতে হয়। যে যতবেশী ফায়েজ অর্জন করতে পারবে, সে ততবেশী উপকৃত হবে। তিনি গত ২রা মার্চ শুক্রবার রাজধানী ঢাকার মতিঝিলের আরামবাগস্থ বাবে রহমত দেওয়ানবাগ শরীফে অনুষ্ঠিত সাপ্তাহিক আশেকে রাসূল (সঃ) মাহফিলে সমবেত হাজার হাজার আশেকে রাসূলের উদ্দেশ্যে বাণী মোবারক প্রদান করছিলেন।
সূফী সম্রাট হুজুর কেবলা বলেন, আদম সন্তানের দিলে শয়তান বাস করে। শয়তানের বাসস্থান মানুষের দিল। হযরত রাসূল (সঃ) ফরমান, যখন সেই দিলে আল্লাহর জ্বিকির জারি হয়, তখন শয়তান তীরের মত ভেগে যায়। এই কারণে আমাদের তরীকায় ক্বালবে জ্বিকির আমরা শিক্ষা দেই। আগে আমরা জানতাম না। আমার মোর্শেদের কাছে জানতে পেরেছি- আত্মশুদ্ধি, দিলজিন্দা, নামাজে হুজুরী। তাফসীর লিখতে গিয়ে পবিত্র কুরআনে পেয়েছি, আল্লাহ্ হযরত মুসা (আঃ)-এর কাছে ওহী নাজিল করে বলেছিলেন, আপনার অনুসারীদেরকে তিনটা বিষয় শিক্ষা দেন- আত্মশুদ্ধি, দিলজিন্দা, নামাজে হুজুরী। হযরত ইব্রাহীম (আঃ)-এর কাছে আল্লাহ্ ওহী নাজিল করে বলেছেন, আপনার অনুসারীদেরকে আত্মশুদ্ধি, দিলজিন্দা, নামাজে হুজুরী শিক্ষা দেন। আমরা এইটা পেয়েছি, আমার মুর্শেদ পীরানে পীর, দস্তগীর, সুলতানুল মাশায়েখ, সুলতানিয়া মোজাদ্দেদীয়া তরীকার ইমাম সৈয়দ আবুল ফজল সুলতান আহমদ (রহঃ)-এর কাছে। এই শিক্ষাটাই আমার মুর্শেদ আমাকে দিয়েছেন। এই শিক্ষাটা সাধনা করতে গেলে মানুষের মধ্যে আল্লাহর প্রেম, রাসূলের প্রেম জাগ্রত হয়। আমরা এটার সাথে সংযোগ করেছি আশেকে রাসূল হওয়া। কারণ রাসূলের যুগ পর্যায়ক্রমে অনেক দূরে, চলে গেছে। এখন হযরত রাসূল (সঃ)-এর শিক্ষা সমাজে নাই। মানুষ রাসূলের কথা বলেই মানুষকে বিপথগামী করে। আমরা ঈমানী পরীক্ষায় পাশ করার জন্য আমরা হযরত রাসূল (সঃ)-এর এই শিক্ষাটায় মিলাদ সংযোগ করেছি। কারণ মিলাদটা পড়লে রাসূলের মহব্বতে কান্না আসে। এই মিলাদটা পড়লে আশেকে রাসূল হওয়াটা সহজ। এছাড়াও আমরা নিয়মিত দরূদ পড়ি।
তিনি বলেন, আমি যখন দেওয়ানবাগ শরীফের বাবে জান্নাতে ছিলাম, তখন ঐখানে এক ঈদে মিলাদুন্নবী (সঃ)-এর সম্মেলনে অসংখ্য লোক হয়েছিল। আমি জিজ্ঞাসা করেছিলাম, আপনারা কারা কারা আমার এখানে এসে রাসূল (সঃ)-কে দেখেছেন? অসংখ্য লোক হাত তুলেছিল। এরপরে আমি বললাম, এতলোক যেহেতু হযরত রাসূল (সঃ)-কে স্বপ্নে দেখেছে, সেহেতু আমরা এখন থেকে সূফী সম্মেলন না করে, আমরা করবো আশেকে রাসূল (সঃ) সম্মেলন। এরপর থেকেই আমরা আশেকে রাসূল (সঃ) সম্মেলন শুরু করি। তখন আমি প্রকাশ্যে ঘোষণা দিয়েছিলাম, আপনারা প্রত্যেকেই নিজ নিজ বাড়ীতে মিলাদ দেন। যারা মিলাদ দিবেন, তারা রাসূলের দিদার পাবেন। রাব্বুল আলামীন দয়া করেছেন, যারা মিলাদ দিয়েছে তাদের রাহমাতাল্লিল আলামীন দয়া করে দিদার দিয়েছেন। বহু লোক রাসূলের দিদার পেয়েছে। এখনও অনেকে আমার কাছে এসে বলে, মিলাদ দিয়ে হযরত রাসূল (সঃ)-এর দিদার পেয়েছে। আপনারা যারা উপস্থিত আছেন, আপনারা কি রাসূল (সঃ)-কে দেখেন না। আপনারা যদি দেখে থাকেন, তবে আপনাদের এদেখা প্রমাণ করে- আপনি রাসূলের উম্মত। না দেখে, না চিনে কিভাবে নিজেকে উম্মত প্রমাণ করবেন।
সূফী সম্রাট হুজুর কেবলা বলেন, যে যাহা ধারন করে তাই তার ধর্ম। আপনার চরিত্রটা কি? শান্তির না অশান্তির। যদি আপনার ধর্ম শান্তির হয়, তবে আপনি মুসলমান। আর অশান্তির হয় তবে আপনি মুসলমান না। এই শিক্ষাটাই অলী-আল্লাহদের দরবারে শিখানো হয়। এই শিক্ষা যেখানে পাবেন, সেখানে আপনার যেতে বাধাঁ নেই। আমাদের দরকার আল্লাহকে পাওয়া, রাসূলকে পাওয়া, চরিত্র সুন্দর করা। আপনি যদি তা করতে পারেন, তবে ঈমানের পরীক্ষায় পাশ করতে পারবেন। আল্লাহ্ কুরআনে বলেন, মু’মেনদের সাথে আল্লাহ্ সকাল সন্ধ্যা দুইবার দিদার দিবেন। আর কাফেরদের সামনে একটা পর্দা করে দিবেন, তারা যেন আল্লাহকে দেখতে না পারে। কাফের আর মুমিনদের মধ্যে পার্থক্য- এক মজলিসে কাফেরদের সামনে পর্দা, আর মুমিনদের সামনে এসে আল্লাহ্ দাঁড়াবেন। মুমেনরা প্রাণভরে আল্লাহকে দেখবেন। আমাদের আল্লাহকে পেতে হবে, রাসূলকে পেতে হবে, চরিত্র সুন্দর করতেই হবে। এই তিনটা না হলে আমরা মুক্তি পাব না। এটা আমাদের মনে রাখতে হবে। এটা গল্পের বিষয় না, সাধনার বিষয়। সাধনা করে যারা আল্লাহকে পেয়েছে, তারা পরম শান্তিতে আছে। আর যারা আল্লাহকে হারিয়েছে তারা চরম অশান্তিতে আছে।
তিনি বলেন, আশেকে রাসূলেরা! মনোযোগ দিয়ে তরীকার কাজ করেন। আমাদের এখানে কুরআন হাদীসের বাইরে কোন কাজ আমরা করি না। আর কেউ তা করুন, সেটাও আমরা পছন্দ করি না। আমরা চাই আমারা যেন রাসূলের দিদার পাই, রাসূলের চরিত্রে চরিত্রবান হতে পারি এবং আল্লাহর দিদার পাই। আপনারা অধিক মোরাকাবা করবেন। হযরত রাসূল (সঃ) পনের বছর মোরাকাবা করার পরেই আল্লাহর সাথে তাঁর যোগাযোগ হয়েছে। আমরা ঐ পনের বছরের মোরাকাবাটা আমাদের সারা জীবনের সাথে মিলিয়ে যদি পাচঁ ওয়াক্ত নামাজে মোরাকাবা করি, আর শেষ রাতে মোরাকাবা করি। এভাবে প্রতিদিন ছয়বার মোরাকাবার মাধ্যমে যদি রাসূলের কাছে যান, গিয়ে কান্নাকাটি করেন। রাসূলের জুতা মোবারক ভিক্ষা নিয়ে আল্লাহর আরশে হাজির হন, কান্নাকটি করেন, আল্লাহর কাছ থেকে ফায়েজ নিয়ে রাসূলের মাধ্যমে আপনার ক্বালবে নিয়ে আসেন, তাহলে আপনার রাসূলের সাথে পরিচয় হবে, আল্লাহর সাথেও পরিচয় হবে। আল্লাহ্ ও রাসূলের সাথে পরিচয় হলে আপনি স্বাধীন, আপনি মুক্ত। আপনার জন্যই আল্লাহর সৃষ্টি জগৎ। সুতরাং মহব্বতের সাথে তরীকার আমল করেন।
সকাল ১০টায় অনুষ্ঠান শুরু হলে- প্রথমে আশেকে রাসূলদের মোহাম্মদী ইসলামের ওয়াজিফার তালিম দেওয়া হয়। দুপুর সাড়ে ১২টায় জু’মার নামাজের আজানের পর মোহাম্মদী ইসলামের মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। অতঃপর বেলা দেড়টায় জু’মার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। এরপর সূফী সম্রাট হুজুর কেবলা মাহফিলে সমবেত হাজার হাজার আশেকে রাসূলদের উদ্দেশ্যে বাণী মোবারক প্রদান করে মাহফিলের আখেরী মুনাজাত পরিচালনা করেন। এরপর তিনি নবাগতদের সবক দেন। মাহফিল শেষে সবাই তাবারুক খেয়ে বিদায় নেন।

Thursday, February 28, 2019

আজ ২৮শে ফেব্রুয়ারী, শুকরিয়া দিবস

আজ ২৮শে ফেব্রুয়ারী, শুকরিয়া দিবস

আজ ২৮শে ফেব্রুয়ারী আশেকে রাসূলদের জন্য শুকরিয়া আদায়ের দিন। গত বছর এদিনে আমাদের মহান মোর্শেদ মহান সংস্কারক মোহাম্মদী ইসলামের পুনর্জীবনদানকারী সূফী সম্রাট হযরত দেওয়ানবাগী (মাঃ আঃ) দয়াল বাবাজান ইউনাইটেড হাসপাতালে ২৫ দিন চিকিৎসার পর তাঁর শারীরিক অবস্থার উন্নতি হলে ২৮শে ফেব্রুয়ারী তাঁকে বাবে রহমত দেওয়ানবাগ শরীফে ফিরিয়ে আনা হয়। আজকের এই শুভ দিনে মহান আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীনের দরবারে জানাই লাখো শুকরিয়া। আল্লাহ্ তায়ালার কাছে প্রার্থনা জানাই- হে প্রভু! তুমি দয়া করে আমাদের দয়াল বাবাজানের হায়াত মোবারক দারাজ করে দাও। তাঁর শরীর মোবারক পূর্ণ সুস্থ রেখো। সারা দুনিয়ার মানুষ যেন তাঁর পরিচয় পেয়ে মোহাম্মদী ইসলামের শিক্ষা গ্রহণ করে আশেকে রাসূল হতে পারে, সেই তাওফিক ভিক্ষা দাও। আমীন।

ডক্টর সৈয়দ এম. সাঈদুর রহমান আল্-মাহবুবী
মহাসচিব
দেওয়ানবাগ শরীফ

Saturday, February 23, 2019

বাবে রহমতের সাপ্তাহিক মাহফিলে সূফী সম্রাট


হযরত রাসূল (সঃ) মে’রাজে গিয়ে আল্লাহকে দেখেছিলেন

মহান সংস্কারক মোহাম্মদী ইসলামের পুনর্জীবনদানকারী সূফী সম্রাট হযরত সৈয়দ মাহ্বুব-এ-খোদা দেওয়ানবাগী (মাঃ আঃ) হুজুর কেবলা বলেন, আল্লাহ্ নিরাকার নন : তাঁর আকার আছে। হযরত রাসূল (সঃ) মে’রাজে গিয়ে আল্লাহকে দেখেছিলেন, তাঁর সাথে কথা বলেছিলেন। হযরত রাসূল (সঃ) কি নিরাকার আল্লাহর সাথে কথা বলেছিলেন? নিরাকার আল্লাহকে কি দেখেছিলেন? নিশ্চয়ই না। তিনি গত ২৩শে ফেব্রুয়ারী শুক্রবার রাজধানী ঢাকার মতিঝিলের আরামবাগস্থ বাবে রহমত দেওয়ানবাগ শরীফে অনুষ্ঠিত সাপ্তাহিক আশেকে রাসূল (সঃ) মাহফিলে সমবেত হাজার হাজার আশেকে রাসূলের উদ্দেশ্যে বাণী মোবারক প্রদান করছিলেন।
সূফী সম্রাট হুজুর কেবলা বলেন, আমরা মাদ্রাসায় যখন পড়তাম, তখন আমাদের শিক্ষকরা পড়াতেন- হযরত জিব্রাঈল (আঃ) হযরত রাসূল (সঃ)-এর কাছে ওহী নিয়ে এসেছিলেন। এর দলিল বুখারী শরীফের কিতাবুল ঈমানের প্রথম হাদীস। কিন্তু এখন আমরা বলছি, আসলে জিব্রাঈল ফেরেশতা রাসূল (সঃ)-কে শিক্ষা দিতে আসেন নাই। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ্ বলেছেন, “আর রাহমানু আল্লামাল কুরআন” অর্থাৎ- দয়াময় আল্লাহ্ (রাসূল কে) কুরআন শিক্ষা দিয়েছেন। আল্লাহ্ বলেন তিনি নিজে রাসূল (সঃ)-কে কুরআন শিক্ষা দিয়েছেন। অথচ সমাজে প্রচলিত আছে, জিব্রাঈল না-কি শিক্ষা দিয়েছেন। এতেই বুঝা যায়- সমাজের প্রচলিত ধারণা ভুল। আল্লাহ্ নিজেই তাঁর হাবীবকে কুরআন শিক্ষা দিয়েছেন। এদিকে হযরত রাসূল (সঃ) বলেছেন, “বুয়িস্তু মুয়াল্লেমাল” অর্থ- “আমি শিক্ষক রূপে প্রেরিত হয়েছি।” আল্লাহ্ যাঁকে সুশিক্ষিত করে শিক্ষক রূপে প্রেরণ করেছেন। তিনি কেন জিব্রাঈলের কাছে থেকে শিক্ষা গ্রহণ করবেন?
তিনি বলেন, আমরা পবিত্র কুরআনের তাফসীর লিখতে গিয়ে দেখেছি, হাদীসের মধ্যে অসংখ্য জাল হাদীস। তখন আমি কি করবো ভেবে বিব্রতকর অবস্থায় পড়ে গেলাম। এরপর আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীনের দয়ায় সমাধান হয়েছে। আমাকে জানিয়ে দেয়া হলো কুরআনের সাথে যে হাদীসের মিল আছে সেটা গ্রহণ করতে, আর যে হাদীস কুরআনের সাথে মিলে না, সেটা পরিত্যাগ করতে। এরপরে, আমি তাফসীরে যে হাদীসের সাথে কুরআন মিলেছে, সেগুলো গ্রহণ করেছি, আর যে হাদীস কুরআনের সাথে মিলে না, সেটা গ্রহণ করিনি। দেখতে গেলে, বাজারে হাদীসের কিতাব সয়লাব হয়ে গেছে। এর মধ্যে কোনটা রাসূলের হাদীস বুঝা কঠিন। এমতাবস্থায় আমরা কিভাবে হাদীসের উপর আমল করবো? কোরআনের তাফসীরের উপর আমল করবো? তাফসীরের মাঝেও অনেক জাল হাদীস ঢুকে গেছে। হযরত রাসূল (সঃ) পরে ইসলামের চরম শত্রু উমাইয়াইতো ক্ষমতায় এসেছে। উমাইয়াদের ৮৯ বছরের শাসনামলে এরা ক্ষমতায় এসে নিজেদের মত ইসলামের নামে চালিয়ে দিয়েছে। আর মোহাম্মদী ইসলামটা থেকে মোহাম্মদ নামটা কেটে দিয়ে দ্বীন ইসলাম লাগিয়ে দিয়েছে। এখন সারাবিশ্বের মানুষ বলে ইসলামের নাম দ্বীন ইসলাম। প্রশ্ন জাগে হযরত রাসূল (সঃ)-এর নাম কোথায় গেল? এতে বুঝা যায় দ্বীন ইসলামে রাসূল (সঃ) নেই। এটা সোয়াবের ইসলাম। সুতরাং আমাদের জানতে হবে আমরা কিভাবে চলবো। একারণেই তরীকার সাধনা করে আপনি যদি অন্তরদৃষ্টি জাগ্রত করতে পারেন, অন্তরের কান জাগ্রত করতে পারেন, অন্তরের মুখ জাগ্রত করতে পারেন, তখন ফায়েজের মাধ্যমে বুঝতে পারবেন, কোনটা সহিহ হাদীস, আর কোনটা জাল হাদীস।
সূফী সম্রাট হুজুর কেবলা বলেন, সারা দুনিয়ার মানুষ মানে আল্লাহ্ নিরাকার। এই জানাটা কি সত্যি? না। বিধর্মীরা হযরত রাসূল (সঃ)-এর ইসলাম ধ্বংস করার জন্য সক্রিয় ছিল। অথচ হযরত রাসূল (সঃ) সব সময় চেষ্টা করেছেন মানুষ যেন আাল্লাহকে পায়। কিন্তু প্রতিপক্ষ ছলে-বলে-কৌশলে হযরত রাসূল (সঃ)-এর ইসলাম থেকে মানুষকে সরিয়ে দিয়েছে। ফলে বিশ্বে এতো মুসলমান হওয়ার পরও ঐক্যমত নেই। দ্বন্দ্ব,কলহ, মারামারি-কাটাকাটি মুসলমানদের ভিতরেই। আল্লাহর রাসূল (সঃ) বলেছেন, অন্যান্য নবীর উম্মতের মধ্যে বাহাত্তর ফেরকা বা দল; আর আমার উম্মতের মধ্যে তিয়াত্তর ফেরকা বা দল। এদের মধ্যে এক দল বেহেস্তী, আর বাহাত্তর দল জাহান্নামী। আবার এটাও বলেছেন, বাহাত্তর দল জাহান্নামী হলেও তিয়াত্তর দলে মধ্যে প্রত্যেক দলেই আলেম থাকবে। তাহলে আমরা কোন দলে যাবো। সব দলইতো নামাজ পড়ে, রোজা রাখে, হজ্ব করে, যাকাত দেয়।
তিনি বলেন, আমাদের চলতে হবে আল্লাহ্ ও আল্লাহ্র রাসূলের বিধান মোতাবেক। আল্লাহ্ ও আল্লাহর রাসূলের বিধান মেনে চলে অলী আল্লাহ্রা। নতুবা কেউ অলী-আল্লাহ্ হতে পারে না। অলী-আল্লাহ্ হতে হলে তাঁকে হযরত রাসূল (সঃ)-এর উত্তরসূরী হতে হবে। আল্লাহর মনোনীত হতে হবে। কামালিয়াতের সার্টিফিকেটটা দেন আল্লাহ্ পাক নিজে। মোর্শেদ তাকে শিক্ষা দেন; আর হযরত রাসূল (সঃ) এবং আল্লাহ্ তাকে পুরুস্কৃত করেন। সুতরাং মনোযোগ দিয়ে তরীকার কাজ করেন এবং আল্লাহ্ সম্বন্ধে জানেন।
সকাল ১০টায় অনুষ্ঠান শুরু হলে- প্রথমে আশেকে রাসূলদের মোহাম্মদী ইসলামের ওয়াজিফার তালিম দেওয়া হয়। দুপুর সোয়া ১২টায় জু’মার নামাজের আজানের পর মোহাম্মদী ইসলামের মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। অতঃপর বেলা দেড় টায় জু’মার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। এরপর সূফী সম্রাট হুজুর কেবলা মাহফিলে সমবেত হাজার হাজার আশেকে রাসূলদের উদ্দেশ্যে বাণী মোবারক প্রদান করে মাহফিলের আখেরী মুনাজাত পরিচালনা করেন। এরপর তিনি নবাগতদের মোহাম্মদী ইসলামের সবক দেন। মাহফিল শেষে সবাই তাবারুক খেয়ে বিদায় নেন।

Saturday, February 16, 2019

বাবে রহমতের সাপ্তাহিক মাহফিলে সূফী সম্রাট


মোহাম্মদী ইসলামের শিক্ষা অনুশীলনের মাধ্যমে সারা পৃথিবীতে শান্তি প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব

মহান সংস্কারক মোহাম্মদী ইসলামের পুনর্জীবনদানকারী সূফী সম্রাট হযরত সৈয়দ মাহবুব-এ-খোদা দেওয়ানবাগী (মাঃ আঃ) হুজুর কেবলা বলেন, মোহাম্মদী ইসলাম কিভাবে বাস্তব জীবনে শান্তি এনে দিতে পারে, এবারের বিশ্ব আশেকে রাসূল (সঃ) সম্মেলনে তা প্রমাণিত হয়েছে। লক্ষ লক্ষ আশেকে রাসূলের এই মিলন মেলা বর্তমান বিশ্বে শান্তি শৃংখলার এক উজ্বল দৃষ্টান্ত। মানুষ হযরত রাসূল (সঃ)-এর শান্তির ধর্ম মোহাম্মদী ইসলামের শিক্ষা অনুশীলন করলে সারা পৃথিবীতে শান্তি প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব। তিনি গত ১৬ই ফেব্রুয়ারী শুক্রবার রাজধানী ঢাকার মতিঝিলের আরামবাগস্থ বাবে রহমত দেওয়ানবাগ শরীফে অনুষ্ঠিত সাপ্তাহিক আশেকে রাসূল (সঃ) মাহ্ফিলে সমবেত হাজার হাজার আশেকে রাসূলের উদ্দেশ্যে বাণী মোবারক প্রদান করছিলেন।
সূফী সম্রাট হুজুর কেবলা বলেন, আমরা সব সময় চেষ্টা করি মানুষকে হযরত রাসূল (সঃ)-এর শিক্ষা দেয়ার জন্য। বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে আমাদের এগারটি দরবার শরীফ ও কয়েকশত খানকাহ্ শরীফ রয়েছে। এসবগুলোতেই ধর্মীয় শিক্ষা দেয়া হয়- কিভাবে একজন মানুষ আত্মশুদ্ধি লাভ করে আদর্শ চরিত্রবান হতে পারে। হযরত রাসূল (সঃ) হেরাগুহায় নির্জনে মোরাকাবা তথা ধ্যান করে আল্লাহকে পেয়েছেন। পৃথিবীতে আগত সমস্ত নবী-রাসূল মোরাকাবা করে আল্লাহকে পেয়েছেন। সুতরাং আমরা যদি আল্লাহকে পেতে চাই, তবে আমাদের মোরাকাবা করতে হবে। মোরাকাবা বিহনে আত্মশুদ্ধি হয় না।
তিনি বলেন, মুসলিম সমাজে কথায় কথায় শিরিক-বিদআত বলতে শুনা যায়। আসলে আল্লাহর সাথে অপর কাউকে শরীক করাকে শিরিক বলে। আমরা নামাজ পড়ি আল্লাহকে সেজদা করার জন্য। কিন্তু নামাজে দাঁড়িয়ে যদি আল্লাহকে ভুলে অন্য কারো কল্পনা করি, আর ঐ অবস্থায় যদি নামাজ আদায় করি, তবে সেটা হবে শিরিক। কারণ আল্লাহ্ হলেন একমাত্র মা’বুদ অর্থাৎ উপাস্য। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ্ তায়ালা শিরিক হতে দূরে থাকার জন্য সতর্ক করেছেন।
সূফী সম্রাট হুজুর কেবলা বলেন, আপনারা নিয়মিত ওয়াজিফার আমল করবেন। আমল না করলে আত্মশুদ্ধি হয় না। আর আত্মশুদ্ধি না হলে তরীকতের নেয়ামত ধরে রাখা যায় না। আমার মোর্শেদ ইমাম শাহ্ চন্দ্রপুরী (রহঃ)-এর দরবার শরীফে অনেক ভক্ত মুরীদান ছিলো। তারা সবাই আমার মোর্শেদের তরীকা গ্রহণ করেছিলেন, তাঁর পবিত্র সোহবত লাভ করেছেন। কিন্তু আমার মোর্শেদের ইন্তেকালের পর তাঁর তরীকা ধরে রাখতে পেরেছে, দেওয়ানবাগ ছাড়া আর কোথাও খুঁজে পাওয়া যায় না। একমাত্র আমরাই ইমাম শাহ্ চন্দ্রপুরী (রহঃ) তরীকা ধরে রাখতে পেরেছি এবং তা প্রচার করে যাচ্ছি।
তিনি বলেন, মানুষের জীবন খুব বেশী দীর্ঘ সময়ের নয়, দেখতে দেখতে আমাদের জীবন শেষ হয়ে যাচ্ছে। আমাদের দরবারে পুরানো জাকের অনেকে মারা গেছেন। এখন আমাদের দরবারে জাকেরের সংখ্যা এত বেশী যে, পুরাতন লোকদের খুঁজে পাওয়া যায় না। যারা আসে, যারা আমার কাছে এসে ডিউটি করে, তাদের অনেককেই আমি চিনি না। কাজেই সময় থাকতেই আমাদের তরীকতের নেয়ামত লাভ করতে হবে। আপনি যদি দুনিয়াতে থাকতেই আল্লাহ্ ও হযরত রাসূল (সঃ)-এর পরিচয় লাভ করতে না পারেন, তবে ঈমান নিয়ে কবরে যাওয়া কঠিন হবে। আপনারা মনোযোগ দিয়ে তরীকার আমল করবেন। কেউ গাফিলতি করবেন না।
সকাল ১০টায় অনুষ্ঠান শুরু হলে- প্রথমে আশেকে রাসূলদের মোহাম্মদী ইসলামের ওয়াজিফার তালিম দেওয়া হয়। দুপুর সোয়া ১২টায় জু’মার নামাজের আজানের পর মোহাম্মদী ইসলামের মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। এরপর দেওয়ানবাগ শরীফের সম্মানীত মহাসচিব বিশিষ্ট লেখক, গবেষক ও সম্পাদক ডক্টর সৈয়দ এম. সাঈদুর রহমান আল্-মাহবুবী মোহাম্মদী ইসলামের শিক্ষা ও তাৎপর্যের উপর আলোচনা করেন। অতঃপর বেলা দেড় টায় জু’মার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। এরপর সূফী সম্রাট হুজুর কেবলা মাহফিলে সমবেত হাজার হাজার আশেকে রাসূলদের উদ্দেশ্যে বাণী মোবারক প্রদান করে মাহফিলের আখেরী মুনাজাত পরিচালনা করেন। এরপর তিনি নবাগতদের মোহাম্মদী ইসলামের সবক দেন। মাহফিল শেষে সবাই তাবারুক খেয়ে বিদায় নেন।

Saturday, February 9, 2019

বাবে রহমতের সাপ্তাহিক মাহফিলে সূফী সম্রাট


আল্লাহ্ তায়ালা আমাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচারকারীদের মিথ্যাবাদী প্রমাণ করেছেন

মহান সংস্কারক মোহাম্মদী ইসলামের পুনর্জীবনদানকারী সূফী সম্রাট হযরত সৈয়দ মাহবুব-এ-খোদা দেওয়ানবাগী (মাঃ আঃ) হুজুর কেবলা বলেন, বিশ্ব আশেকে রাসূল (সঃ) সম্মেলন সাফল্যজনকভাবে অনুষ্ঠিত হওয়ার মাধ্যমে আল্লাহ্ তায়ালা আমাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচারকারীদের মিথ্যাবাদী প্রমাণ করেছেন। আমরা যে সত্য ধর্ম প্রচার করি, তা মানুষ বুঝতে পেরেছে। তিনি গত ৯ই ফেব্রুয়ারী শুক্রবার রাজধানী ঢাকার মতিঝিলের আরামবাগস্থ বাবে রহমত দেওয়ানবাগ শরীফে অনুষ্ঠিত সাপ্তাহিক আশেকে রাসূল (সঃ) মাহফিলে সমবেত হাজার হাজার আশেকে রাসূলের উদ্দেশ্যে বাণী মোবারক প্রদান করছিলেন।

সূফী সম্রাট হুজুর কেবলা বলেন, আল্লাহ্ পাকের অপার দয়ার বদৌলতে আমরা পীরানে পীর, দস্তগীর, সুলতানুল মাশায়েখ, সুলতানিয়া-মোজাদ্দেদীয়া তরীকার ইমাম সৈয়দ আবুল ফজল সুলতান আহমদ চন্দ্রপুরী (রহঃ)-এর ১০৮তম শুভ জন্মবার্ষিকী স্মরণে গত শুক্রবার বিশ্ব আশেকে রাসূল (সঃ) সম্মেল উদযাপন করেছি। এবারের সম্মেলনটা ছিল একটি ব্যতিক্রমধর্মী সম্মেলন। আমরা সম্মেলন যেন করতে না পারি, সেজন্য অনেক ষড়যন্ত্র হয়েছে। কিন্তু রাব্বুল আলামীনের অপার দয়ার বরকতে আমরা সুন্দরভাবে সম্মেলন করতে পেরেছি। এটা আল্লাহর বিশেষ দয়া।
তিনি বলেন, নবীদের যুগ, রাসূলের যুগ, আওলিয়ায়ে কেরামের যুগ অতিবাহিত হয়েছে। তাঁরা আল্লাহর একত্ববাদের প্রমাণ মানবজাতির কাছে তুলে ধরেছেন। তাঁরা বলেছেন, আল্লাহ্ এক। এক আল্লাহর পরিচয় তুলে ধরার কারনে, মানুষকে আল্লাহর পথে আহ্বান করার কারনে, তাঁদের কেহ কেহ শহীদ পর্যন্ত হয়েছেন। আল্লাহ্ পাকের অপার দয়ায় আমরা একেবারে সহজে আল্লাহর পরিচয় তুলে ধরতে সক্ষম হয়েছি। মানুষ বলে, আল্লাহ্ নিরাকার। আমরাও বলতাম, আল্লাহ্ নিরাকার। সাধনা জগতে গিয়ে জানলাম আল্লাহর পরিচয় লাভ করা যায়। নিরাকারের তো আর পরিচয় পাওয়া যায় না। আমি আল্লাহর পরিচয় তুলে ধরে প্রথমে ‘আল্লাহ্ কোন পথে’ নামক একটা কিতাব লিখেছি। পরে ‘আল্লাহকে সত্যিই কি দেখা যায় না?’ নামে আরেকটি কিতাব লিখেছি। তখন আমার বিরুদ্ধে আদালতে মামলা হয়েছে। আমি, আমার স্ত্রী, আমার বড় মেয়ে, সাঈদুর মিয়াসহ যারা আমাদের কিতাবের সাথে জড়িত সবার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। মোট সতের জন আসামী ছিল। আমি তখন আমার কিতাবের স্বপক্ষে আল্লাহকে দেখা যায়, এই মর্মে একটা স্টেটমেন্ট লিখে উকিলের মাধ্যমে আদালতে পাঠাই। সেটার নাম ছিল ‘সূফী সম্রাটের জবানবন্দী’। জজ সাহেব আমার জবানবন্দী পড়ে মুগ্ধ হয়ে আমার দরবার শরীফে এসে তরীকা গ্রহণ করেন। এরপর মামলার অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে খারিজ করে দেন।
সূফী সম্রাট হুজুর কেবলা বলেন, আমি আল্লাহর পরিচয় বিস্তারিতভাবে প্রকাশ করার জন্য ‘তাফসীরে সূফী সম্রাট দেওয়ানবাগী’ লিখেছি। এতে পবিত্র কুরআনের বাণী ও হযরত রাসূল (সঃ)-এর বাণী দিয়ে আল্লাহর পরিচয় জগতবাসীর কাছে তুলে ধরেছি। আল্লাহর দয়ায় সম্মেলনের আগের সোমবার আমি এই তাফসীরের নবম খণ্ড লেখা সম্পন্ন করেছি।
তিনি বলেন, এই তাফসীরের ৬ খণ্ড ইতিমধ্যেই প্রকাশিত হয়েছে। অবশিষ্ট সপ্তম অষ্টম ও নবম এই তিন খণ্ড ছাপানোর প্রক্রিয়া চলছে। এই তাফসীর পাঠ করে বুঝবেন, যারা আল্লাহকে নিরাকার বলছে, তাদের কত বড় ভুল। আল্লাহ্ বলেন, আমার আকার আছে। আর আপনি বলবেন, আল্লাহর আকার নেই। তবে তো আপনি সরাসরি আল্লাহ্র বিপক্ষে চলে গেলেন। আপনারা এই তাফসীর পড়ে বুঝতে পারবেন। আল্লাহ্ নিজের পরিচয় তুলে ধরেছেন। আল্লাহ্ বলেন, আমি সমস্ত জ্বীন ও ইনসানকে সৃষ্টি করেছি, তাদের রিজিকের ব্যবস্থা করেছি; আমি আসমান জমিনের সমস্ত প্রাণীকে সৃষ্টি করেছি, এদের রিজিকের ব্যবস্থা করেছি। তারপরও মানুষ বলে আল্লাহ্ নিরাকার। এটা কি আল্লাহর জন্য কষ্টের নয়। নিরাকার মানে কিছুই না। আসলে নিরাকার বলতে কিছু নেই। তবে একটা জিনিস আছে, তা হলো ‘ঘোড়ার ডিম।’ কথাটা সমাজে বহুল প্রচলিত। কারণ ঘোড়া জিন্দেগীতে ডিমও পাড়বে না; আর এই ডিমের আকারও হবে না। বিধর্মীদের ষড়যন্ত্র আর স্বধর্মীদের অজ্ঞতার সুযোগে আল্লাহকে নিরাকার বলে প্রচার করা হয়েছে। আল্লাহকে নিরাকার বলার কারনেই মুসলিম জাতির উপর খোদায়ী গজব আসছে। অন্য কোন জাতির উপর এরকম গজব নেই। সারা বিশ্বে মুসলমানরা ইবাদত বন্দেগীও বেশী করে, গজবেও বেশী পড়ে। আপনি যার ইবাদত করেন, আপনি যদি তাকে নিরাকার বলেন, তিনি কি খুশী হবেন? আল্লাহ্ নিজের পরিচয় প্রচারের জন্য এক লক্ষ চব্বিশ হাজার নবী-রাসূল পাঠিয়েছেন, তাঁরা সবাই স্বজাতির কাছে আল্লাহর পরিচয় তুলে ধরেছেন।
সূফী সম্রাট হুজুর কেবলা বলেন, মুসলিম জাতির আরেকটি ভ্রান্ত ধারণা যে, হযরত রাসূল (সঃ) গরীব ছিলেন। অথচ তাঁর দাদা ছিলেন মক্কার শাসনকর্তা। তাঁর পিতা ছিলেন আন্তর্জাতিক ব্যবসায়ী। শৈশবে হযরত রাসূল (সঃ) দাদার তত্ত্বাবধানেই লালিত পালিত হন। তিনি মক্কার সবচেয়ে ধনাঢ্য রমনী হযরত খাদিজা (রাঃ)-কে বিয়ে করেছিলেন। তাঁর দরবারে প্রতিদিন তিন থেকে চারশত লোক খাবার খেতেন। তিনি গরীব হলে প্রতিদিন কি এতলোক খাওয়াতে পারতেন? আমরা যদি কুলকায়েনাতের রহমত হযরত রাসূল (সঃ)-কে গরীব বলি, তবে তিনি আমাদের সাহায্য করবেন কিভাবে?
তিনি বলেন, আমরা আল্লাহ্ ও হযরত রাসূল (সঃ) সম্বন্ধে আমাদের ধারণা ও বিশ্বাস ঠিক রেখে সাধনা করলে তবেই মঞ্জিলে মকসুদে পৌঁছতে পারবো। আপনারা মনোযোগ দিয়ে তরীকার কাজ করেন। তাহলে আল্লাহর সাহায্য পাবেন।
সকাল ১০টায় অনুষ্ঠান শুরু হলে- প্রথমে আশেকে রাসূলদের মোহাম্মদী ইসলামের ওয়াজিফার তালিম দেওয়া হয়। দুপুর সাড়ে ১২টায় জু’মার নামাজের আজানের পর মোহাম্মদী ইসলামের মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। এরপর দেওয়ানবাগ শরীফের সম্মানিত মহাসচিব বিশিষ্ট লেখক, গবেষক ও সম্পাদক ডক্টর সৈয়দ এম. সাঈদুর রহমান আল্-মাহবুবী মোহাম্মদী ইসলামের শিক্ষা ও তাৎপর্যের উপর আলোচনা করেন। অতঃপর বেলা ২টায় জু’মার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। এরপর সূফী সম্রাট হুজুর কেবলা মাহফিলে সমবেত হাজার হাজার আশেকে রাসূলদের উদ্দেশ্যে বাণী মোবারক প্রদান করে মাহফিলের আখেরী মুনাজাত পরিচালনা করেন। এরপর তিনি নবাগতদের সবক দেন। মাহ্ফিল শেষে সবাই তাবারুক খেয়ে বিদায় নেন।

Tuesday, February 5, 2019

বাংলাদেশের ২০টি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিতে সাবধান !!!

অবৈধভাবে পরিচালিত হচ্ছে ২০ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। সারা দেশে এসব প্রতিষ্ঠানের ৩ শতাধিক ক্যাম্পাসও চলছে অবৈধভাবে। ক্যাম্পাসগুলোতে যেসব কোর্স ও প্রোগ্রাম পাঠ্য তাতেও নেই সরকারি অনুমোদন। শুধু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ই নয়, ‘বিদেশী বিশ্ববিদ্যালয়’ হিসেবে যারা নিজেদের পরিচয় দিচ্ছে, তাদেরও সরকারি অনুমোদন নেই। যে কারণে এসব প্রতিষ্ঠান থেকে অর্জিত সনদ বাস্তব জীবনে কোনো কাজে আসছে না। এ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে সরকারি তরফে প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে সাবধান থাকতে বলা হচ্ছে

এ ব্যাপারে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ জানান, ‘১৫টি বিশ্ববিদ্যালয়কে আমরা কালো তালিকাভুক্ত করেছি। এসব প্রতিষ্ঠান সরকারের আইন-কানুন মানতে চায় না। তারা আদালতের নিষেধাজ্ঞা নিয়ে চলছে। এখন আমরা এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের মামলাগুলোর এক কোর্টে এনে নিষ্পত্তির ব্যবস্থা করব। এ ব্যাপারে ইতিমধ্যে সিদ্ধান্ত হয়েছে।

ইউজিসির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও সদস্য (বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়) অধ্যাপক আতফুল হাই শিবলি শনিবার বিকালে মোবাইল ফোনে জানান, ‘অবৈধ ও ভুয়া বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এবং তাদের ক্যাম্পাস সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের সতর্ক করে আমরা খুব শিগগিরই একটি গণবিজ্ঞপ্তি জারি করব। এ নিয়ে কাজ চলছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আইনত কোনো বিদেশী বিশ্ববিদ্যালয় এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক স্বীকৃত নয়।’ উচ্চ মাধ্যমিকের ফলপ্রকাশের পর শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন।


এ পরিস্থিতিতে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের খাঁচায় ভরতে একশ্রেণীর শিক্ষা বেনিয়া ‘বিশ্ববিদ্যালয়’র ফাঁদ পেতে বসেছে। অনুসন্ধানে জানা গেছে, প্রায় সারা দেশেই দেশী-বিদেশী অবৈধ ও ভুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ছড়িয়ে দিয়েছে প্রতারকরা। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় এ ধরনের অন্তত তিন শতাধিক অবৈধ বিশ্ববিদ্যালয় বা ক্যাম্পাস রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হয়ে ইতিমধ্যে অনেকেই প্রতারিত হয়েছেন। লাখ লাখ টাকা খরচ ও বছরের পর বছর পার করেও বেশিরভাগ ছাত্রছাত্রী তাদের শিক্ষাজীবন শেষ করতে পারেননি। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে চলতি মৌসুমে সরকার একদফা বৈধ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকা প্রকাশ করেছে। দ্বিতীয় দফায় সমস্যাপূর্ণ বিশ্ববিদ্যালয়েরও তালিকা প্রকাশ করবে বলে জানা গেছে।

সূত্রগুলো জানায়, যেসব বিশ্ববিদ্যালয়ের মালিকানা নিয়ে দ্বন্দ্ব রয়েছে এবং যারা অবৈধ আউটার ও শাখা ক্যাম্পাস পরিচালনা করছে সরকার মূলত তাদের ব্যাপারে এ যাত্রায় সতর্ক করে বিজ্ঞপ্তি জারি করবে। এ ধরনের প্রতিষ্ঠান রয়েছে ১২টি। এছাড়া ২টি প্রতিষ্ঠান রয়েছে যা বহু আগেই সরকার কর্তৃক কালো তালিকাভুক্ত, কিন্তু আদালতে মামলা করে স্থিতাদেশের জোরে চলছে। ভুয়া বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে ৩টি। বাকিগুলো নানা অবৈধ কার্যক্রমে জড়িত এবং সরকারের সঙ্গে সেগুলোর মামলা চলমান রয়েছে।

যে ২০ প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিতে সাবধান ভিডিওটি দেখতে এখানে ক্লিক করুন । 

জানা গেছে, শিক্ষা মন্ত্রণালয় ২৬ জুন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অবৈধ কার্যক্রম সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন এ সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠিয়েছে। এছাড়া অবৈধ ক্যাম্পাস বন্ধে শিক্ষা মন্ত্রণালয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়েও একাধিক পত্রও দিয়েছে।

সংসদীয় কমিটির প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ১৫টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মামলাসংক্রান্ত জটিলতা রয়েছে। এগুলো হচ্ছে- দি পিপলস, দারুল ইহসান, প্রাইম, অতীশ দীপংকর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সাউদার্ন, নর্দার্ন, বিজিসি ট্রাস্ট, ইবাইস, আমেরিকান ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি, আমেরিকা বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি, কুইন্স ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি চট্টগ্রাম (ইউএসটিসি), ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস এগ্রিকালচার অ্যান্ড টেকনোলজি (আইইউবিএটি)। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য জটিলতাও রয়েছে। এর মধ্যে প্রথম নয়টি অবৈধ ক্যাম্পাস চালাচ্ছে। এক্ষেত্রে অবশ্য কেউ কেউ উচ্চ আদালতের স্থিতাদেশকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করছে। এই নয়টির মধ্যে আবার দারুল ইহসান, প্রাইম এবং ইবাইস নিয়ে মালিকানা দ্বন্দ্ব রয়েছে। এর মধ্যে দারুলের চারটি পক্ষ মিলে সারা দেশে অন্তত ১৪০টি অবৈধ ক্যাম্পাস চালাচ্ছে বলে জানা গেছে।

এই চার পক্ষের একটি হচ্ছে উত্তরার জনৈক আবুল হোসেন। তিনি প্রাইম ইউনিভার্সিটিরও মালিক দাবিদার। অবশ্য প্রাইমের (মিরপুরের ২এ/১, নর্থ দারুস সালাম রোড মিরপুর ১ নম্বর বাদে) উত্তরার বিএনএস সেন্টারসহ যত অবৈধ ক্যাম্পাস আছে তা উচ্ছেদের ব্যাপারে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ৪ আগস্ট স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে পত্র দিয়েছে। এ পত্রের পরিপ্রেক্ষিতে ১৩ আগস্ট স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে মহাপুলিশ পরিদর্শককে (আইজিপি) চিঠি দেয়া হয়। যদিও গত তিন দিনেও পুলিশের পক্ষ থেকে ক্যাম্পাস উচ্ছেদে কোনো তৎপরতা লক্ষ্য করা যায়নি। এছাড়া ইবাইস ইউনিভার্সিটি নিয়েও মালিকানা দ্বন্দ্ব রয়েছে। পাশাপাশি এই বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক অবৈধ ক্যাম্পাসও রয়েছে।

যেসব বিশ্ববিদ্যালয়ের মালিকানা দ্বন্দ্ব এবং অবৈধ ক্যাম্পাস রয়েছে, ওইসব প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের ভর্তি না হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন ইউজিসির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ড. আতফুল হাই শিবলি। তিনি বলেন, এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হলে এক ধরনের ঝুঁকি থেকে যায়। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে আসন সংখ্যার কোনো সংকট নেই। তাই ইউজিসির ওয়েবসাইট দেখে ও খোঁজখবর নিয়েই শিক্ষার্থীদের ভর্তি হওয়া উচিত।
জানা গেছে, আউটার ক্যাম্পাস বাণিজ্যে আরও যারা লিপ্ত রয়েছে তাদের মধ্যে একটি ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব চিটাগাং (আইআইইউসি)। এই প্রতিষ্ঠানটি মামলার জোরে ঢাকায় একটি ক্যাম্পাস চালাচ্ছে। এর বাইরে চট্টগ্রামের বহদ্দার হাটেও একটি ক্যাম্পাস তারা খুলেছে বলে জানা গেছে। ইউনিভার্সিটি অব সাউথ এশিয়া সম্প্রতি রাজশাহীতে অবৈধ একটি ক্যাম্পাস খুলেছে বলে ইউজিসি সূত্র জানিয়েছে।

এর বাইরে প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি, পিচব্লেন্ড, মদিনাতুল উলুম বিশ্ববিদ্যালয়, আমেরিকান ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটিসহ বেশ কয়েকটি ভুয়া বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। বাস্তবে এসব নামে কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন দেয়নি সরকার। জানা গেছে, প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির নামে ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে যিনি ক্যাম্পাস চালাচ্ছেন, তিনি এর আগে পিচব্লেন্ড নামে অবৈধ আরেকটি বিশ্ববিদ্যালয় চালাতেন। পিচব্লেন্ড সরকার বন্ধ করে দেয়ার পর মাঝখানে বেশ কিছু দিন তিনি নিবৃত্ত ছিলেন। এখন আবার জনগণকে প্রতারিত করতে প্রিমিয়ারের নামে একটি বিশ্ববিদ্যালয় খুলেছেন। এর বাইরে রাজশাহী অঞ্চলে ‘মদিনাতুল উলুম বিশ্ববিদ্যালয়’ নামে আরও একটি ভুয়া বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করতে সম্প্রতি শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পত্র দেয়া হয়েছে।

আমেরিকান ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটিও এক সময়ে অবৈধভাবে পরিচালিত হতো। সরকারের কড়াকড়ির কারণে এটি বন্ধ হয়েছিল। কিন্তু সম্প্রতি এটি ফের চালু হয়েছে বলে মন্ত্রণালয়ের নথিপত্রে দেখা গেছে। আমেরিকান বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি (আমবান) সরকার বন্ধ ঘোষণা করলেও তারা সারা দেশে ২২টি অবৈধ ক্যাম্পাস চালাচ্ছে। একই ভাবে কুইন্স ইউনিভার্সিটিও অবৈধভাবে তাদের কার্যক্রম চালাচ্ছে। সরকার কয়েক বছর আগে এদের কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করে।

চটকদার বিজ্ঞাপনের বাহার : এদিকে বিদেশী বিশ্ববিদ্যালয়ের নামেও একশ্রেণীর প্রতিষ্ঠান মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। এর বাইরে যুক্তরাজ্য, চীন, রাশিয়া, সাইপ্রাসসহ বিশ্বের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজ ইত্যাদিতে ভর্তির ফাঁদও রয়েছে, যার চটকদার বিজ্ঞাপন প্রতিদিন পত্রিকার পাতা খুললেই নজরে পড়ে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এর ফলে অনেকেই প্রতারিত হতে পারেন। শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, তাদের হিসাবেই বর্তমানে ঢাকাসহ সারা দেশে অন্তত ৬৮টি বিদেশী বিশ্ববিদ্যালয় বা এর শাখা ও স্টাডি সেন্টার রয়েছে। তবে বাস্তবে এসব প্রতিষ্ঠান শতাধিক রয়েছে বলে জানা গেছে। এই উদ্ভূত পরিস্থিতিতে একদিকে অভিভাবক-শিক্ষার্থী অন্যদিকে সরকার বা শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে এ ব্যাপারে সজাগ হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

অ্যাসোসিয়েশন অব প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিসের সাবেক সহ-সভাপতি ও ইস্টার্ন ইউনির্ভাসিটির ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য আবুল কাশেম হায়দার বলেন, অবৈধ ক্যাম্পাস এবং সনদ বাণিজ্যের ব্যাপারে সমিতি সব সময়ই সোচ্চার। তাদের পক্ষ থেকে অবৈধ বিশ্ববিদ্যালয় এবং ক্যাম্পাসের বিষয়ে বারবার বলার পরও কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। উল্টো এক শ্রেণীর কর্মকর্তা এসব প্রতিষ্ঠানে আত্মীয়-স্বজনদের চাকরি দেয়, আবার কেউ কমিশন নেয়।
-তথ্য সূত্র : টেকিব্লগ

"আজ অবিস্মরণীয় ৫ই ফেব্রুয়ারী"

আজ ৫ই ফেব্রুয়ারী আশেকে রাসূলদের জন্য একটি অবিস্মরণীয় দিন। ২০১৭ সালের এদিনে আমাদের মহান মোর্শেদ শ্রেষ্ঠ সংস্কারক মোহাম্মদী ইসলামের পুনর্জীবনদানকারী সূফী সম্রাট হযরত দেওয়ানবাগী (মাঃ আঃ) দয়াল বাবাজান আকস্মিকভাবে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে তাঁকে বিকেল ৫টায় রাজধানী ঢাকার ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। হাসপাতালে ২৫দিন চিকিৎসার পর তাঁর শারীরিক অবস্থার উন্নতি হলে ২৮শে ফেব্রুয়ারী তাঁকে বাবে রহমত দেওয়ানবাগ শরীফে ফিরিয়ে আনা হয়।

দয়াল বাবাজানের অসুস্থতার সংবাদ নির্মিষেই সারা দুনিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে। ফলে সমস্ত আশেকে রাসূলদের মাঝে শোকের ছায়া নেমে আসে। আশেকে রাসূলরা স্বীয় মোর্শেদের সুস্থতা কামনা করতঃ মানত করে, দরূদ শরীফ পড়ে, মিলাদ পড়ে, নফল নামাজ ও রোজা পালন করে, আল্লাহ্ তায়ালার কাছে প্রার্থনা জানান। আল্লাহ্ তায়ালার অসীম রহমতে তিনি সুস্থ হয়ে আবার আমাদের কাছে ফিরে এসেছেন। আলহামদুলিল্লাহ।
আজকের এদিনে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা জানাই- "হে প্রভু! তুমি দয়া করে আমাদের দয়াল বাবাজানের হায়াত মোবারক দারাজ করে দাও। তাঁর শরীর মোবারক পূর্ণ সুস্থ রেখো। সারা দুনিয়ার মানুষ যেন তাঁর পরিচয় পেয়ে মোহাম্মদী ইসলামের শিক্ষা গ্রহণ করে আশেকে রাসূল হতে পারে, সেই তাওফিক ভিক্ষা দাও। আমীন।"

Friday, January 25, 2019

পূর্ণিমার চাঁদের অনুষ্ঠানে সূফী সম্রাট

“পূর্ণিমার চাঁদের অনুষ্ঠানে আল্লাহর রহমত পাওয়া যায়”


মহান সংস্কারক মোহাম্মদী ইসলামের পুনর্জীবনদানকারী সূফী সম্রাট হযরত সৈয়দ মাহবুব-এ-খোদা দেওয়ানবাগী (মাঃ আঃ) হুজুর কেবলা বলেন, পূর্ণিমার চাঁদের অনুষ্ঠানে আল্লাহর রহমত পাওয়া যায়। তিনি গত ২১শে ডিসেম্বর, শুক্রবার রাজধানী ঢাকার মতিঝিলের আরামবাগস্থ বাবে রহমত দেওয়ানবাগ শরীফে ‘আল্লাহর দেয়া পুরস্কার : পূর্ণিমার চাঁদে বাবা দেওয়ানবাগীর জীবন্ত প্রতিচ্ছবি’ উপলক্ষে অনুষ্ঠিত বিশেষ আশেকে রাসূল (সঃ) মাহফিলে সমবেত হাজার হাজার আশেকে রাসূলের উদ্দেশ্যে বাণী মোবারক দিচ্ছিলেন।

সূফী সম্রাট হুজুর কেবলা বলেন, পূর্ণিমার অনুষ্ঠানের দিন যে আল্লাহর দয়া, রহমত ও বরকতের, তা আমাদের জানা ছিল না। যখন জাকেররা ভিন্ন ভিন্ন জায়গায় পূর্ণিমার চাঁদে দেখে বিভিন্ন এলাকা থেকে মিছিল করে এসেছে, তাদের কাছ থেকে শুনলাম কি হয়েছে। এরপরে আস্তে আস্তে দেশ-বিদেশ থেকে জাকেররা শ্রদ্ধা জানানোর জন্য দলে দলে এসেছিল। আমাদের প্রায় তিন মাস লেগেছে, জাকেরদেরকে জেলা ভিত্তিক সংবর্ধনা দেয়ার সময় দিতে।
তিনি বলেন, হযরত রাসূল (সঃ) কোন শুভ সংবাদ, ভাল সংবাদ পেলে সাহাবাদেরকে নিয়ে দুই রাকাত সালাতুস শুকুর নামাজ আদায় করতেন। আমরাও সেই অনুযায়ী প্রতি মাসের পূর্ণিমায় সালাতুস শুকুর আদায় করি।
সূফী সম্রাট হুজুর কেবলা বলেন, আল্লাহ্ পাক চাঁদে যে তাঁর নিদর্শন দেখাবেন, তা আমরাও আগে জানতাম না। পরে খুঁজতে খুঁজতে পবিত্র কোরআনে দুইটি আয়াত আর হাদীস শরীফের ছাব্বিশটা হাদীস পেয়েছি। এরপর থেকে আমরা এটা পালন করে যাচ্ছি। আসলে ধর্মে অনেক কিছু আছে, যা আমরা হারিয়ে ফেলেছি। নিয়মিত যদি আমরা আল্লাহর বিধি-বিধান মেনে চলি, তাহলে আল্লাহর পক্ষ থেকে আমাদের প্রতি রহমত, বরকত নাজিল হবে, আমরা উপকৃত হব, আমরা আল্লাহর দয়া পাবো।
তিনি বলেন, নিয়মিত এই সময়গুলো আমরা ধরে রাখতে পারলে আল্লাহর দয়া দ্বারাই আমাদের জীবন অতিবাহিত করতে পারবো। আপনারা নিয়মিত দরবার শরীফে আসবেন। আসলে আত্মার মাঝে বাস্তবে যে শান্তিটা পাবেন, সেটাকেই ইসলাম বলে। সাহাবায়ে কেরাম হযরত রাসূল পাক (সঃ)-এর সান্নিধ্যে গিয়ে যে শান্তিটা পেত, এই শান্তিটাই ইসলাম। আমরা যদি নিয়মিত দরবার শরীফে আসি, আর এই শান্তিটা পেতে পারি, তাহলে আমাদের ব্যক্তি জীবনে ইসলামের প্রকৃত শান্তি পাব। পাশাপাশি এই সোহবতের মাধ্যমেই আমাদের ভিতরের যে দোষত্রুটি আছে সেগুলো আল্লাহ্ দয়া করে দূর করে দিবেন, আমরা চরিত্রবান হবো। এজন্য আমাদের নিয়মিত তরীকার আমলও করা লাগবে, আর ঘন ঘন দরবার শরীফেও আসতে হবে।
সকাল ১০টায় অনুষ্ঠান শুরু হলে- প্রথমে আশেকে রাসূলদের মোহাম্মদী ইসলামের ওয়াজিফার তালিম দেওয়া হয়। দুপুর সোয়া ১২টায় জু’মার নামাজের আজানের পর মোহাম্মদী ইসলামের মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। এরপর মোহাম্মদী ইসলামের শিক্ষা ও আদর্শ বাস্তব জীবনে প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে বিশদভাবে আলোচনা করেন- দেওয়ানবাগ শরীফের মহাসচিব, বিশিষ্ট লেখক, গবেষক ও সম্পাদক ডক্টর সৈয়দ এম. সাঈদুর রহমান আল্-মাহবুবী। অতঃপর বেলা দেড়টায় দুই রাকাত সালাতুস শুকুরের পর জু’মার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। এরপর সূফী সম্রাট হুজুর কেবলা মাহফিলে সমবেত হাজার হাজার আশেকে রাসূলদের উদ্দেশ্যে বাণী মোবারক প্রদান করে মাহফিলের আখেরী মুনাজাত পরিচালনা করেন। এরপর তিনি নবাগতদের সবক দেন। মাহফিল শেষে সবাই তাবারুক খেয়ে বিদায় নেন।

Monday, January 21, 2019

বিশেষ সতর্কীকরণ

বিশেষ সতর্কীকরণ

আশেকে রাসূল ভাইয়েরা! আসসালামু আলাইকুম। সকলের অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে, বিগত কিছুদিন যাবত দেখা যাচ্ছে ফেসবুকে বিভিন্ন নামে-বেনামে একাউন্ট চালু করে ও গ্রুপ খুলে আমাদের ছবি এমনকি আমাদের নাম ব্যবহার করে কথাও প্রচার করা হচ্ছে।

























বাংলাদেশ সরকারের ডিজিটাল তথ্য প্রযুক্তি আইনে- “একজন ব্যক্তির ছবি অন্য একজন ব্যবহার করা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ।” সুতরাং অন্য কারো একাউন্টের প্রোফাইল পিকচার, কভার ফটো কিংবা গ্রুপের কভার ফটোতে আমাদের ছবি ব্যবহার করা দণ্ডনীয় অপরাধ ও গর্হিত কাজ। তাই এই কাজ থেকে সবাইকে বিরত থাকার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি। পাশাপাশি আরো জানাচ্ছি যে, আমাদের ভেরিফাইড পেইজ ছাড়া সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আমাদের আর কোন একাউন্ট, পেইজ বা গ্রুপ নেই। কেউ আমাদের নামে ফেসবুক একাউন্ট বা গ্রুপ চালু করে আমাদের নাম ব্যবহার করলে আপনারা বিভ্রান্ত হবেন না। আমাদের নতুন নতুন খবরা খবর জানতে আমাদের ভেরিফাইড পেইজের সাথে থাকুন। আমাদের ব্যবহৃত ভেরিফাইড পেইজসমূহ হলো-
https://www.facebook.com/thevoiceofmuhammadiislam/
https://www.facebook.com/Dr-Syed-M-Sayedur-Rahman-Al-Mahbubi-1959859344078411/
https://www.facebook.com/Dr-Syed-AFM-Barkat-E-Khoda-919059081561970/
https://www.facebook.com/Syed-AFM-Rahmat-E-Khoda-1513999225343882/

প্রফেসর ডক্টর সৈয়দ এ.এফ.এম. বরকত-এ-খোদা
সৈয়দ এ.এফ.এম. রহমত-এ-খোদা

চিরশান্তির ধর্ম মোহাম্মদী ইসলাম

চিরশান্তির ধর্ম মোহাম্মদী ইসলাম
ডক্টর সৈয়দ এম. সাঈদুর রহমান আল মাহবুবী
একবিংশ শতাব্দীর ঊষালগ্নে ‘মোহাম্মদী ইসলাম’ একটি নব জাগরণের নাম। অশান্ত পৃথিবীতে শান্তি প্রতিষ্ঠার এক অনন্য প্রতীক। মোহাম্মদী ইসলামের শিক্ষায় আলোকিত হয়ে মানুষে মানুষে হানাহানি, যুদ্ধ-বিগ্রহ, জঙ্গীবাদ, সন্ত্রাসের অবসান ঘটিয়ে মাটির পৃথিবীকে শান্তির স্বর্গে পরিণত করা সম্ভব। আর একারণেই এর জনপ্রিয়তা ও বিস্তৃতি এত দ্রুত ও ব্যাপকতর।
কারো কারো কাছে ‘মোহাম্মদী ইসলাম’ অভিনব মনে হলেও আসলে তা সুপ্রাচীন ও মৌলিক ধর্ম। বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (সঃ) দীর্ঘ পনের বছর হেরা গুহায় মোরাকাবা করে আল্লাহ্ তায়ালার কাছ থেকে যে বাণী লাভ করেছিলেন, এরই পরিপূর্ণরূপ হলো মোহাম্মদী ইসলাম। তাঁর নবুয়তী জীবনের তেইশ বছরে এর পূর্ণতা এসেছে বলেই পবিত্র কুরআনে বর্ণিত হয়েছে, আল্লাহ্ তায়ালা বলেন, “আজ আমি তোমাদের ধর্মকে পূর্ণ করে দিলাম, এতে আমার নেয়ামত পরিপূর্ণ করে দিলাম এবং ইসলামকে একমাত্র ধর্ম হিসেবে মনোনীত করলাম” (সূরা- আল মায়িদাহ, আয়াত-৩)।
রাহমাতুল্লিল আলামীন হযরত মুহাম্মদ (সঃ)-এর শান্তির ধর্ম মোহাম্মদী ইসলামের মৌলিক শিক্ষা ছিল- (১) আত্মশুদ্ধি, (২) দিল জিন্দা ও (৩) নামাজে হুজুরী। পবিত্র কুরআনে বর্ণিত হয়েছে, আল্লাহ্ তায়ালা বলেন, “সেই সফলকাম, যে আত্মশুদ্ধি লাভ করেছে ও প্রভুর নামের জ্বিকির করে, অতঃপর নামাজ কায়েম করে” (সূরা- আল্ আ‘লা, আয়াত-১৪ ও ১৫)। অধিকন্তু তিনি সাহাবীদেরকে তাঁর মহব্বত অর্জনের মাধ্যমে পরিপূর্ণ ঈমানদার হওয়ার শিক্ষা দিতেন। কারণ হযরত রাসূল (সঃ)-এর মহব্বত হাসিল না হলে পরিপূর্ণ ঈমানদার হওয়া যায় না। পবিত্র কুরআনে বর্ণিত হয়েছে, আল্লাহ্ তায়ালা বলেন, “হে হাবীব! আপনি বলে দিন, তোমরা যদি আল্লাহকে ভালবাস, আমাকে অনুসরণ কর, তবে আল্লাহ্ও তোমাদের ভালবাসবেন, তোমাদের পাপসমূহ ক্ষমা করবেন” (সূরা- আলে ইমরান; আয়াত- ৩১)। হাদীস শরীফে বর্ণিত হয়েছে, হযরত রাসূল (সঃ) বলেন, “যে ব্যক্তি নিজের জান-মাল, পিতা-মাতা, সন্তান-সন্ততি যাবতীয় সব কিছুর চেয়ে আমাকে বেশী ভাল না বাসবে, সে মু’মিন হতে পারবে না” (বুখারী ও মুসলিম শরীফ)। হযরত রাসূল (সঃ) আইয়্যামে জাহেলীয়াতের মানুষদের মোহাম্মদী ইসলামের মৌলিক শিক্ষা দিয়ে আশেকে রাসূল বানিয়ে পরিপূর্ণ ঈমানদারে পরিণত করেছিলেন। ফলে মুসলিম জাতি জ্ঞান-বিজ্ঞানে, শক্তি-সামর্থে, ধন-সম্পদে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ জাতিতে উন্নীত হয়েছিল। এ প্রসঙ্গে পবিত্র কুরআনে বর্ণিত হয়েছে, “তোমরাই শ্রেষ্ঠ জাতি। তোমাদের উত্থিত করা হয়েছে মানব জাতির জন্য; তোমরা সৎকার্যে আদেশ কর, অসৎ কার্যে নিষেধ কর” (সূরা-আলে ইমরান, আয়াত-১১০)।
মোহাম্মদী ইসলামের স্বর্ণযুগ ছিল ৫৩ বছর। হযরত রাসূল (সঃ)-এর নবুয়তী যুগের ২৩ বছর ও খোলাফায়ে রাশেদার ৩০ বছর। মোহাম্মদী ইসলামের মূল চালিকা শক্তি ছিল হযরত মুহাম্মদ (সঃ)-এর রূহানী শক্তি। একথা সর্বজন সুবিদিত যে, তিনি কোন মক্তব, মাদ্রাসা, স্কুল, কলেজ কিংবা ইউনিভার্সিটিতে অধ্যয়ন করেননি। হেরা গুহায় মোরাকাবার মাধ্যমে আধ্যাত্মিক জ্ঞান অর্জন করে তাঁর মাঝে যে রূহানী শক্তির সঞ্চার হয়েছিল, ঐ শক্তি দিয়েই তিনি বর্বর আরবদের আত্মা পরিশুদ্ধ করে আদর্শ চরিত্রবান করেছিলেন।
হযরত মুহাম্মদ (সঃ)-এর শিক্ষার ছিল চারটি দিক। তিনি বলেন, “শরীয়ত আমার কথা, তরীকত আমার কাজ, হাকীকত আমার অবস্থা ও মারেফত আমার নিগূঢ় রহস্য। এই চারটি শিক্ষা দিয়েই তিনি মানুষকে আদর্শবান করে গড়ে তুলেছিলেন। শরীয়তের নির্দেশনা অনুযায়ী তরীকতের আমল করলে মানুষের মাঝে হাকীকতের বিশেষ অবস্থা সৃষ্টি হয়। এরপরই মারেফতের সুফল লাভ করা যায়। উপমা স্বরূপ বলা যায়- যদি কারো আম খাওয়ার ইচ্ছা হয়, তবে তার এই ইচ্ছাটা শরীয়ত। আমের আটি মাটিতে বপন করে পানি দিয়ে পরিচর্য্যা করে চারা গাছ জন্মানো হলো তরীকত। ঐ পরিচর্য্যার ফলে গাছে যে ফুল ফুটে এটা হাকীকত। আর ঐ ফুলে আম ধরাই হলো মারেফত তথা- চূড়ান্ত সফলতা।
হযরত রাসূল (সঃ) শরীয়তের নির্দেশনা অনুসারে তরীকতের আমল করিয়ে মানুষের মাঝে হাকীকতে ইনসানের চরিত্র গঠন করতেন। আর তখনই বর্বর যুগের অসভ্য মানুষগুলো মারেফতের আলোয় উদ্ভাসিত হয়ে আদর্শবান হয়ে যেত। এজন্যই শরীয়তের পাশাপাশি মারেফতের গুরুত্ব সম্বন্ধে পবিত্র কুরআনে বর্ণিত হয়েছে, আল্লাহ্ তায়ালা বলেন, “আমি তোমাদের প্রত্যেকের জন্য শরীয়ত ও স্পষ্ট পথ (মারেফত) নির্ধারণ করেছি” (সূরা-আল মায়িদাহ আয়াত- ৪৮)। হাদীস শরীফে বর্ণিত হয়েছে, হযরত রাসূল (সঃ) জ্ঞানকে দুইভাগে বিভক্ত করেছেন। তিনি বলেন, “জ্ঞান দুই প্রকার। তাঁর মধ্যে অন্তরের জ্ঞান মানুষের জন্য পরম উপকারী। মৌখিক জ্ঞান (কিতাবী জ্ঞান) আদম সন্তানদের জন্য আল্লাহ্র দলিল স্বরূপ।” -আল হাদীস। অন্তরের জ্ঞান দিয়ে মানুষ আত্মশুদ্ধি অর্জন করে আদর্শ চরিত্রবান হয়ে আল্লাহ্র নৈকট্য লাভ করতঃ আশরাফুল মাখলুকাতের মর্যাদায় উন্নীত হতে পারে। বাহ্যিক জ্ঞান তথা কিতাবী জ্ঞান দিয়ে ধর্ম সম্বন্ধে ধারণা লাভ করা গেলেও মানব জীবনে ধর্মের বাস্তবতা উপলব্ধি করা যায় না।
প্রকৃতপক্ষে, হযরত রাসূল (সঃ)-এর অন্তরের নূরে মোহাম্মদীই হেদায়েতের মূল চালিকা শক্তি। এর মাধ্যমেই একজন মানুষ স্রষ্টা ও সৃষ্টি সম্বন্ধে জ্ঞান লাভ করে দুনিয়ার ও আখেরাতের কল্যাণ সাধন করতে পারে। হযরত রাসূল (সঃ)-এর এই শিক্ষা ৬১ হিজরীতে কারবালায় ইমাম হোসাইন (রাঃ)-এর শাহাদাৎ বরণের মাধ্যমে জগত থেকে বিলুপ্ত হয়ে যায়। কারণ ঐ হেদায়েতের নূর তখনও তাঁর মাধ্যমে জগতে বিরাজমান ছিল। ইমাম হোসাইন (রাঃ) শাহাদাত বরণের পর মুসলিম জাতি সেই হেদায়েতের নূর হারিয়ে ফেলে। এতে ইলমে মারেফতের আলোর পথ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় মোহাম্মদী ইসলাম প্রাণহীন হয়ে পড়ে। ফলে মুসলিম জাতি আল্লাহ্ তায়ালা ও হযরত রাসূল (সঃ)-এর সাথে যোগাযোগের পথ ভুলে গিয়ে ধর্মের বাস্তবতা হারিয়ে শরীয়ত সর্বস্ব হয়ে কিতাব নির্ভর হয়ে পড়ে। এতে মুসলমানদের মধ্যে নানা রকম মতভেদ সৃষ্টি হয়ে বিভিন্ন মতবাদ ও দলের উদ্ভব ঘটে। যেমন, শিয়া, খারেজী, মুতাজিলা, আশারিয়া প্রভৃতি। পরবর্তীতে হানাফী, শাফেয়ী, হাম্বলী, মালেকী মাজহাবসহ আরো বহু মাজহাব সৃষ্টি হয়।
অপর দিকে হযরত রাসূল (সঃ)-এর মারেফতের শিক্ষার অনুসারী মুসলমানরা লোক চক্ষুর অন্তরালে সাধনা ও আরাধনায় আত্মনিয়োগ করেন। তারা তখন ‘আবিদ’ (ইবাদতকারী), ‘যাহিদ’ (দুনিয়া বিরাগী), ‘নাহিদ’ (ক্রন্দনকারী) নামে অভিহিত হতেন। আবার কোথাও কোথাও ‘মুকাব্বার’ (নৈকট্য লাভকারী), ‘সাবেরীন’ (ধৈর্য্যশীল), ‘আবরার’ (পূণ্যবান) প্রভৃতি নামেও অভিহিত হতেন। পরবর্তীতে তাঁরাই সূফী নামে পরিচিতি লাভ করেন।
ঐতিহাসিক ইবনে খালদুন তাঁর বিখ্যাত ইতিহাস গ্রন্থ “কিতাবুল এবার”-এর আল-মুকাদ্দিমা’য় উল্লেখ করেছেন, “প্রাচীনকালের মুসলমানরা এবং তাঁদের বিশিষ্ট ব্যক্তিগণ তথা- হযরতের সাহাবা, তাবেঈন ও তাবে-তাবেঈন সূফী মতবাদকে সত্য ও মুক্তির পথ বলে মনে করতেন। গভীর নিষ্ঠার সহিত আল্লাহ্র উপর নির্ভর করা, আল্লাহ্র জন্য সর্বস্ব ত্যাগ, পার্থিব জাঁক-জমক, বিলাশ-ব্যাসন, আমোদ-আহলাদ, ঐশ্বর্য্য ও ক্ষমতা প্রভৃতি যা কিছু মানুষের কাম্য, তার সবই ত্যাগ করে জনসমাজের বাইরে নির্জনে আল্লাহ্র আরাধনায় নিয়োজিত থাকাই হলো সূফী মতবাদের মৌলিক নীতি। সাহাবীগণ ও প্রথম যুগের মুসলমানগণও এ নীতি সমর্থন করতেন।”
কালক্রমে সূফীবাদে বিভিন্ন তরীকার উদ্ভব হয়। যেমন, কাদরীয়া তরীকা, চিশতীয়া তরীকা, নকশবন্দীয়া তরীকা, মোজাদ্দেদীয়া তরীকা, সুলতানিয়া-মোজাদ্দেদীয়া তরীকা, সোহরাওয়ার্দীয়া তরীকা, কলন্দরীয়া তরীকা, ওয়ায়সীয়া তরীকা, খিজিরিয়া তরীকা প্রভৃতি। বর্তমান পৃথিবীতে প্রায় চারশ’ তরীকা বিদ্যমান। এসব তরীকার অনুসারীরা তাঁদের নিজ নিজ তরীকার সাধনায় নিমগ্ন। বিভিন্ন তরীকার মাঝে ওয়াজিফা, নিয়ম, নীতিতে পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়। এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশী লক্ষ্যণীয় যে, তাঁরা ভিন্ন ভিন্ন তরীকা পালন করতে গিয়ে বিভিন্ন গ্রুপে বিভক্ত হয়ে পড়েছে।
শরীয়ত ও মারেফত পন্থীদের বিভিন্ন মতাদর্শ ও বিভক্তি সমগ্র মুসলিম উম্মাহকে বহু দলে ভাগ করে ফেলেছে- যা বিশ্ব মুসলিম ঐক্য ও সংহতি বিনষ্ট করছে। শুধু তাই নয়, এই দলাদলির কারণে মুসলমানরা রাহ্মাতাল্লিল আলামীন হযরত রাসূল (সঃ)-কে ছেড়ে দিয়ে নিজেদের মতাদর্শকে প্রতিষ্ঠা করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। পৃথিবীতে এমনি এক নাজুক পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে যে, শরীয়তপন্থীরা বলে মারেফতের দরকার নেই। আর মারেফতপন্থীরা বলে শরীয়তের প্রয়োজন নেই। অথচ পবিত্র কুরআনে শরীয়ত ও মারেফত এ উভয়ের উপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। আর এ উভয় জ্ঞানের শিক্ষাই হযরত রাসূল (সঃ) দিয়ে গেছেন। হযরত রাসূল (সঃ)-এর হেরা গুহায় ধ্যানে মগ্নতা, তারপর বাস্তব জগতে প্রত্যাবর্তন। এক কথায় পারমার্থিতা ও যুক্তি তথা আধ্যাত্মিকতা ও কর্ম নিষ্ঠার সমন্বয়ই হলো মোহাম্মদী ইসলামের বৈশিষ্ট্য। মরমীবাদ দিয়ে যাঁর শুরু, শ্রেষ্ঠ জাতি গঠনের মধ্য দিয়ে তাঁর পূর্ণতা। সুতরাং মোহাম্মদী ইসলামে শরীয়ত ও মারেফত এ উভয় বিদ্যাই অত্যাবশ্যক। এর একটি, অপরটির পরিপূরক ও সম্পূরক।
মুসলিম উম্মাহ হযরত রাসূল (সঃ)-এর মৌলিক শিক্ষা হারিয়ে ফেলার কারণে আল্লাহ্ তায়ালার রহমত ও হযরত রাসূল (সঃ)-এর বরকত হতে বঞ্চিত হয়ে চরম দুরবস্থার মাঝে নিপতিত। একদিকে ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের আক্রমণ, অন্যদিকে স্বধর্মীদের আত্মঘাতি সংঘাত সংঘর্ষ মুসলমানদের জন্য সুস্থ ও স্বাভাবিকভাবে ধর্ম চর্চা ও জীবন যাপন করা কঠিন হয়ে পড়েছে। এহেন বিশ্ব পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে রাহ্মাতুল্লিল আলামীন হযরত রাসূল (সঃ)-এর চিরশান্তির ধর্ম মোহাম্মদী ইসলাম পৃথিবীময় পুনর্জাগরণের মাধ্যমে মুসলিম জাতিকে সমহীমায় অধিষ্ঠিত করার জন্য আল্লাহ্ দয়া করে শ্রেষ্ঠ সংস্কারক সূফী সম্রাট হযরত সৈয়দ মাহবুব-এ-খোদা দেওয়ানবাগী (মাঃ আঃ) হুজুর কেবলাজানকে এ পৃথিবীতে প্রেরণ করেছেন। তিনি ইলমে শরীয়ত, তরীকত, হাকীকত ও মারেফতের আলোকে মোহাম্মদী ইসলাম জগৎবাসীর কাছে তুলে ধরেছেন। তাঁর শিক্ষা লাভ করে একজন মানুষ আত্মশুদ্ধি, দিল জিন্দা ও নামাজে হুজুরী অর্জন করে আদর্শ চরিত্রবান হয়ে আশেকে রাসূলে পরিণত হতে পারে।
সূফী সম্রাট হযরত দেওয়ানবাগী (মাঃ আঃ) হুজুর কেব্লাজান বেলায়েতের যুগের শ্রেষ্ঠ সংস্কারক। তিনি মুসলিম সমাজে ইসলামের নামে প্রবিষ্ট পবিত্র কুরআন ও হাদীস বিরোধী কুসংস্কারকগুলো বিদূরিত করে হযরত রাসূল (সঃ)-এর প্রকৃত আদর্শ ও শিক্ষা তুলে ধরেছেন। তিনি হযরত রাসূল (সঃ)-এর সীরাজাম্মুনীরার ধারক ও বাহক। তাঁর প্রবল রূহানী শক্তির বদৌলতে মোহাম্মদী ইসলাম বাংলাদেশের ৬৪টি জেলাসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে অতি দ্রুততার সাথে ছড়িয়ে পড়েছে। মোহাম্মদী ইসলামের পরশ পেয়ে হতাশাগ্রস্ত মুসলমানদের মাঝে নতুন আশার সঞ্চার হয়েছে। আজ বিশ্ববাসীর কাছে মোহাম্মদী ইসলাম শান্তির প্রতীক। এই মোহাম্মদী ইসলামের তরীতে আরোহণ করে মানুষ মহান আল্লাহ্ ও হযরত রাসূল (সঃ)-এর নৈকট্য লাভ করে ইহকালে শান্তি ও পরকালের মুক্তি লাভ করতে সক্ষম।
প্রায় দেড় হাজার বছর পূর্বে হযরত রাসূল (সঃ)-এর মোহাম্মদী ইসলাম যেভাবে জাহেলী যুগের মানুষদের পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ জাতিতে পরিণত করেছিল, তেমনি এযুগেও পৃথিবীর সমস্ত দ্বন্দ্ব-কলহ, হানা-হানি, যুদ্ধ-বিগ্রহের অবসান ঘটিয়ে মুসলিম জাতিকে সর্বদিক থেকে একটি আদর্শবান ও সমৃদ্ধশালী জাতিতে পরিণত করতে সক্ষম। আর মোহাম্মদী ইসলামের এই পুনর্জাগরণের সর্বময় কৃতিত্ব হলো শ্রেষ্ঠ সংস্কারক সূফী সম্রাট হযরত দেওয়ানবাগী (মাঃ আঃ) হুজুর কেব্লাজানের। তাঁর এই অসাধারণ কৃতিত্বের জন্য হযরত রাসূল (সঃ) তাঁকে ৫ই এপ্রিল ১৯৮৯ সালে “মোহাম্মদী ইসলামের পূনর্জীবনদানকারী” খেতাবে ভূষিত করেন।
লেখক : উপাচার্য্য, সূফী সম্রাট দেওয়ানবাগী ইন্টরন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি